পৌরনীতির আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মূল্যবোধ (Values)। মূল্যবোধ সমাজ কাঠামোর অপরিহার্য উপাদান। মূল্যবোধ মানুষের জীবনে ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত করে, সমাজিক জীবনকে সুদৃঢ় করে এবং বাক্তি ও সমাজের মধ্যে যথার্থ সম্পর্ক নির্ণয় করে। মূল্যবোধ সামাজিক মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। সামাজিক শৃঙ্খলা, সংহতি ও সম্প্রীতি বজায় রেখে সামাজিক উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে। আজকে আমরা আলোচনা করবো মূল্যবোধ কি বা কাকে বলে ?
মানুষের আচার-আচরণ, রীতিনীতি, কার্যক্রম, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা-চেতনা প্রভৃতি মূল্যবোধ অনুযায়ী পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। একজন আদর্শ নাগরিকের মধ্যে মূল্যবোধ বিদ্যমান থাকা উচিত। কেননা মূল্যবোধ মানুষকে উচিত-অনুচিত সম্পর্কে শিক্ষা দেয় এবং যা কিছু মন্দ তা পরিত্যাগ করে, যা কিছু ভালো তা গ্রহণের দিকে তাড়িত করে। এজন্য নাগরিক জীবনে মূল্যবোধের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
মূল্যবোধ কি বা কাকে বলে ?
যেসব চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য আদর্শ মানুষের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড ও আচার-ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে তাকেই সাধারণত মূল্যবোধ বলা হয়। মূল্যবোধ মানুষের মধ্যে একদিনে তৈরি হয় না । ব্যক্তির মূল্যবোধ অনেক বছর ধরে সমাজে বসবাস করতে করতে তৈরি হয় । তাই সকল মানুষের মূল্যবোধ একরকম হয় না।
মূল্যবোধ সমাজের ভিত্তি। প্রত্যেক সমাজে ভালো-মন্দের একটি মানদণ্ড আছে। এই মানদণ্ডের আলোকে ভালো-মন্দ আচরণের বিচার করা হয়। মূলত মূল্যবোধ হলো রীতিনীতি, আদর্শ ও আচার-আচরণের সমষ্টি যা সমাজ জীবনকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত করে এবং সমাজে ঐক্য ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে।
সমাজবিজ্ঞানী এম. আর, উইলিয়াম (M.R. William) বলেন, “মূল্যবোধ মানুষের ইচ্ছার একটি মানদণ্ড যার আদর্শে মানুষের ব্যবহার ও রীতিনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সমাজে মানুষের কাজের ভালো-মন্দের বিচার করা হয়। “
মূল্যবোধ সেই সব বিশ্বাস, আদর্শ, রীতিনীতির সমষ্টি, যা মানুষের আচার-ব্যবহার, কার্যাবলি, সিদ্ধান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গীকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত করে।
আরও পড়ুন>>> সাম্য কি ? সাম্যের ৭ টি শ্রেণিবিভাগ, গুরুত্ব, স্বাধীনতা ও সাম্যের সম্পর্ক আলোচনা করুন
মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of values)
সামাজিক মূল্যবোধের ধারণা বিশ্লেষণ করলে কতকগুলো বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় । বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :
১. সামাজিক মানদণ্ড: সামাজিক মূল্যবোধ মানুষের আচার-আচরণ বিচারের মানদণ্ড। মূল্যবোধের মাপকাঠিতে মানুষের কাজের ভালো-মন্দ বিচার করা হয়। মূল্যবোধ মানুষের ব্যবহার, রীতিনীতি , আচার আচরণ পরিমাপ ও নিয়ন্ত্রণ করে।
২. সামাজিক সেতুবন্ধন: মূল্যবোধের চেতনা সমাজের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে। মূল্যবোধ সমাজের মানুষের আচার-আচরণ, রীতিনীতি, চাওয়া-পাওয়া ইত্যাদির মধ্যে যোগসূত্র ও সেতুবন্ধন রচনা করে।
৩. পরিবর্তনশীলতা: মূল্যবোধ পরিবর্তনশীল। সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মূল্যবোধেরও পরিবর্তন ঘটে। কারণ মানুষের চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, চাহিদা ইত্যাদি সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ মানুষের মননশীলতার ওপর মূল্যবোধ নির্ভরশীল।
৪. বিভিন্নতা: স্থান-কালভেদে মূল্যবোধ বিভিন্ন রকম হতে পারে। অর্থাৎ একেক সমাজে মূল্যবোধ একেক ধরনের। যেমন- মুসলিম সমাজের মূল্যবোধ আর খ্রিস্টান সমাজের মূল্যবোধ এক নয়। আবার হিন্দু সমাজের মূল্যবোধ এবং খ্রিস্টান সমাজের মূল্যবোধ এক নয়।
৫. নৈতিক প্রাধান্য: মূল্যবোধ আইন নয় বরং কতকগুলো রীতিনীতি, আচার-আচরণের সমষ্টি যা নৈতিকতা থেকে উৎসারিত এবং সমাজের মানুষের স্বীকৃতির ফলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়। এগুলো লঙ্ঘন করলে শাস্তির বিধান নেই তবে সামাজিক ঘৃণা কুড়াতে হয়।
৬. সমষ্টির প্রভাব: মূল্যবোধ সমাজের মানুষের সামগ্রিক ধ্যান-ধারণার সমষ্টি। এজন্য মূল্যবোধ ব্যক্তিগত আগ্রহ-অনাগ্রহকে প্রভাবিত করে না। এখানে ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা গৌণ হয়ে পড়ে বিধায় ব্যক্তি সমষ্টিগত মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত হয়।
৭. আপেক্ষিকতা: সামাজিক মূল্যবোধ যেমদ সমাজভেদে ভিন্ন হয়। তেমনি একই মূল্যবোধ সমাজভেদে ইতিবাচক ও নেতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তাই সামাজিক মূল্যবোধ একটি আপেক্ষিক প্রত্যয়।
বস্তুত ব্যক্তি ও সমটির কাছে কোনটি উচিত আর কোনটি উচিত নয় তা মূল্যবোধের মানদণ্ডেই গ্রহণীয় কিংবা বর্জনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
মূল্যবোধের শ্রেণিবিভাগ Classification of Values
মূল্যবোধ বিভিন্নরকম হতে পারে। ডেনিল এইচ পারকার মূল্যবোধকে (১) বাস্তব জীবন ভিত্তিক মূল্যবোধ ও (২) কল্পনা প্রসূত মূল্যবোধ এ দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন। কেউ কেউ আবার মূল্যবোধকে ইতিবাচক ও নেভিবাচক এ দু’ভাগে ভাগ করেছেন। নিম্নে বিভিন্ন ধরনের মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. ব্যক্তিগত মূল্যবোধ (Personal values)
ব্যক্তিগত মূল্যবোধ ব্যক্তির ধ্যান-ধারণার সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। অর্থ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, মর্যাদা ইত্যাদি ব্যক্তিগত মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে। সমাজে সকল ব্যক্তির মধ্যে এরূপ চিন্তা- চেতনা কম-বেশি পরিলক্ষিত হয়।
২. রাজনৈতিক মূল্যবোধ (Political values)
যেসব চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য, আদর্শ মানুষের রাজনৈতিক আচার-ব্যবহার ও কর্মকান্তকে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত করে, তার সমষ্টিকে রাজনৈতিক মূল্যবোধ বলে। রাজনৈতিক সততা, শিষ্টাচার, সহনশীলতা, নির্বাচনে জয়-পরাজয়কে মেনে নেওয়া ইত্যাদি রাজনৈতিক মূল্যবোধ।
৩. সামাজিক মূল্যবোধ (Social values)
মানুষের সামাজিক আচার-ব্যবহার, কর্মকাণ্ডকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রণকারী চিন্তা, ভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্যসমূহকে সামাজিক মূল্যবোধ বলে। সামাজিক মূল্যবোধ হচ্ছে শিষ্টাচার, সততা, ন্যায়বোধ, সহমর্মিতা, নৌজন্যবোধ, শৃঙ্খলাবোধ প্রকৃতি গুণাবলির সমষ্টি। সামাজিক মূল্যবোধ হলো ব্যক্তির এরূপ ধ্যান-ধারণা যার মধ্যে অপরের কল্যাণ নিহিত থাকে। এরূপ মূল্যবোধে অপরের কল্যাণ প্রাধান্য লাভ করে। সামাজিক মূল্যবোধ সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের মধ্যে বিকশিত হয়।
৪. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ (Democratic values)
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অন্তর্ভুক্ত হলো স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ববোধ ইত্যাদি। গণতন্ত্র সুদৃঢ়, সুসংহত এবং শক্তিশালী রূপদানের জন্য এরূপ মূল্যবোধের গুরুত্ব অভ্যধিক। মানুষের যে সব চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড, আচার-ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ পরিচালিত করে, তাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। গণতান্ত্রিক যাষ্ট্রের নাগরিক একে অপরের মতামত প্রকাশের সুযোগ দিবে, নিজের মতামতপ্রকাশ করবে। গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড যেমন, নির্বাচনের অংশ নেয়া, জয়-পরাজয় মেনে নেওয়া, অধিকার-কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকা ইত্যাদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন।
৫. ধর্মীয় মূল্যবোধ (Religious values)
যেসব ধর্মীয় অনুশাসন, রীতিনীতি, আচার-আচরণ মানুষের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত করে, তাকেই ধর্মীয় মূল্যবোধ বলা হয়। যেমন- অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, অন্য ধর্মমতকে সহ্য করা, অন্য ধর্ম পালনে বাধা না দেওয়া ইত্যাদি ধর্মীয় মূল্যবোধ।
৬. সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ (Cultural values)
মানুষের সাংস্কৃতিক আচার-ব্যবহার ও কর্মকাণ্ডকে পরিচালিত ও প্রভাবিত করে এমন সব চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্যই হলো সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ। সমাজে বসবাসকারী মানুষের ভিন্ন জীবনাচার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ধ্যান-ধারণা, আচার-ব্যবহার, কর্মকাণ্ড ও সংগঠন থাকতে পারে। এসবের প্রতি সকলের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা, বাধা না দেওয়াই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ সমাজিক বন্ধনকে সুসংহত করে।
৭. অর্থনৈতিক মূল্যবোধ (Economic values)
মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পন্ন করতে যেসব কাজ-কর্ম, বিধি-নিষেধ, আদর্শ মেনে চলে তাকে অর্থনৈতিক মূল্যবোধ বলে। আর্থিক লেনদেন, বিক্রয়, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্পোৎপাদন, বিপনন এসবের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক মূল্যবোধ জড়িত। অর্থনৈতিক মূল্যবোধ রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে অর্থনৈতিক সমতা রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৮. আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ (Spiritual values)
সব মানুষের মধ্যে কিছু আধ্যাত্মিক বা আত্মিক মূল্যবোধ থাকে। এ জন্য মানুষ সৎভাবে, সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে চায়। মানুষ তার সহজাত আত্মিক মূল্যবোধের কারণে অসত্য, অসুন্দর, অকল্যাণকর সবকিছুকে অপছন্দ করে। আর যা কিছু ভালো তা পছন্দ করে, সমর্থন করে। মানুষের অন্তর্নিহিত আত্মিক শক্তিই এসব কাজে প্রেরণা যোগায়। আত্মিক মূল্যবোধ মানুষকে মহিমান্বিত করে।
৯. নৈতিক মূল্যবোধ (Moral values)
নৈতিক মূল্যবোধ হলো যেসব আচরণ, মনোভাব, কর্মকাণ্ড যা মানুষ সবসময় ভালো, কল্যাণকর, অপরিহার্য বিবেচনা করে মানসিকভাবে স্বাচ্ছন্দ ও তৃপ্তিবোধ করে। সত্যকে সত্য বলা, মিথ্যাকে মিথ্যা, অন্যায়কে ঘৃণ করা, অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সুখ-দুঃখে প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে অংশীদার হওয়া ইত্যাদিকে নৈতিক মূল্যবোধ বলা যায়। নীতি, উচিত-অনুচিত যোধ হলো নৈতিক মূল্যবোধের উৎস।
১০. আধুনিক মূল্যবোধ (Modern values)
সময় ও সমাজের পরিবর্তনের সাথে সাথে মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটে। এ জন্য অতীতের অনেক মূল্যবোধই এখন তাৎপর্যহীন হয়ে পড়েছে। একসময় আমাদের সমাজে মেয়েদের লেখাপড়াকে ভালো চোখে দেখা হতো না। এখন নারী শিক্ষা, নারীর অগ্রগতি আমাদের কাম্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতীতে বাল্য বিবাহ, বহুবিবাহ সমাজে প্রচলিত ছিল। হিন্দু সমাজে একসময়ে সতীদাহ, সহমরণ প্রথা চালু ছিল। এখন আর এগুলো নেই। বর্তমানের আনক মূল্যবোধই হয়তো ভবিষ্যতে থাকবে না। গড়ে উঠবে নতুন মূল্যবোধ। তাই বলা যায়, আধুনিক ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস-আচার-আচরণের সমষ্টিই আধুনিক মূল্যবোধ।
১১. শৈল্পিক বা নান্দনিক মূল্যবোধ (Artistic values)
সুকুমার বৃত্তিসমূহের সূক্ষ্ম প্রকাশই শৈল্পিক বা নান্দনিক মূল্যবোধ। মানুষের কথা, চাল-চলন, আচার-ব্যবহার, বিভিন্ন অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানে তার উপস্থিতি, অংশগ্রহণের ধরনসহ প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে রুটী-দৃষ্টিভঙ্গির চমৎকার, ইতিবাচক, আকর্ষণীয় বহিঃপ্রকাশের সময়িই নান্দনিক মূল্যবোধ। কেউ চমৎকার বাচন- ডাদি দিয়ে, কথা দিয়ে, কেউবা ব্যবহার দিয়ে, কেউ আবার পরিপাটি রুচীশীল পোশাক পরে মানুষকে মুগ্ধ করে। শৈল্পিকতা নান্দনিক মূল্যবোধ মানবিক গুণাবলিকে অধিক মাত্রায় উন্নত করে।
আরও পড়ুন >>> পৌরনীতি ও সুশাসন বলতে কি বুঝ?
কিছু গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন ও তার উত্তর
মূল্যবোধ কি ?
যেসব চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য আদর্শ মানুষের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড ও আচার-ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে তাকেই সাধারণত মূল্যবোধ বলা হয়।
মূল্যবোধ কাকে বলে ?
যেসব চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ মানুষের সামগ্রিক কাজকর্ম ও আচার-ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে তাকেই সাধারণত মূল্যবোধ বলে ।
মূল্যবোধ বলতে কি বুঝায় ?
মূল্যবোধ সেই সব বিশ্বাস, আদর্শ, রীতিনীতির সমষ্টি, যা মানুষের আচার-ব্যবহার, কার্যাবলি, সিদ্ধান্ত ও দৃষ্টিভঙ্গীকে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত করে। মূল্যবোধ মানুষের মধ্যে একদিনে তৈরি হয় না । ব্যক্তির মূল্যবোধ অনেক বছর ধরে সমাজে বসবাস করতে করতে তৈরি হয় । তাই সকল মানুষের মূল্যবোধ একরকম হয় না।
সামাজিক মূল্যবোধ বলতে কি বুঝায় ?
মানুষের সামাজিক আচার-ব্যবহার, কর্মকাণ্ডকে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রণকারী চিন্তা, ভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্যসমূহকে সামাজিক মূল্যবোধ বলে। সামাজিক মূল্যবোধ হচ্ছে শিষ্টাচার, সততা, ন্যায়বোধ, সহমর্মিতা, নৌজন্যবোধ, শৃঙ্খলাবোধ প্রভৃতি গুণাবলির সমষ্টি।
ধর্মীয় মূল্যবোধ কি ?
যেসব ধর্মীয় অনুশাসন, রীতিনীতি, আচার-আচরণ মানুষের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত করে, তাকেই ধর্মীয় মূল্যবোধ বলা হয়। যেমন- অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন, অন্য ধর্মমতকে সহ্য করা, অন্য ধর্ম পালনে বাধা না দেওয়া ইত্যাদি ধর্মীয় মূল্যবোধ।
মূল্যবোধ ও আচরণের মধ্যে পার্থক্য ?
যেসব চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ মানুষের সামগ্রিক কাজকর্ম ও আচার-ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত করে তাকেই সাধারণত মূল্যবোধ বলে। অন্যদিকে বিভিন্ন পরিবেশে একজন ব্যক্তির সাড়া দেওয়ার প্রক্রিয়াকে আচরণ বলে ।