ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা- ১ম পত্র
অধ্যায়-১ ব্যবসায়ের মৌলিক ধারণা
অধ্যায়-২ ব্যবসায় পরিবেশ
অধ্যায়-৩ একমালিকানা ব্যবসায়
অধ্যায়-৪ অংশীদারি ব্যবসায়
অধ্যায়-৫ যৌথ মূলধনী ব্যবসায়
অধ্যায়-৬ সমবায় সমিতি
অধ্যায়-৭ রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়
অধ্যায়-৮ ব্যবসায়ের আইনগত দিক
অধ্যায়-৯ ব্যবসায়ে সহায়ক সেবা
অধ্যায়-১০ ব্যবসায় উদ্যোগ
অধ্যায়-১১ ব্যবসায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
অধ্যায়-১২ ব্যবসায় নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা- ২য় পত্র
অধ্যায়-১ ব্যবস্থাপনার ধারণা
অধ্যায়-২ ব্যবস্থাপনার নীতি
অধ্যায়-৩ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ
অধ্যায়-৪ সংগঠিতকরণ
অধ্যায়-৫ কর্মীসংস্থান
অধ্যায়-৬ নেতৃত্ব
অধ্যায়-৭ প্রেষণা
অধ্যায়-৮ যোগাযোগ
অধ্যায়-৯ সমন্বয়সাধন
অধ্যায়-১০ নিয়ন্ত্রণ
Monday, May 20

জাবেদা কাকে বলে? বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব প্রকারভেদ

Author – SABBIR HASAN        Date : 15/02/2023

জাবেদার সংজ্ঞা / জাবেদা কাকে বলে / যৌগিক দালিখা / সরল দাখিলা / জাবেদার বৈশিষ্ট্য / জাবেদার প্রকারভেদ / হিসাবের প্রাথমিক বই / হিসাবের সহকারি বই / হিসাব বিজ্ঞান জাবেদা / জাবেদা pdf / Definition of Journal / jabeda accounting /
জাবেদা কাকে বলে

জাবেদা কী ?/ জাবেদা কাকে বলে ?

জাবেদা কাকে বলে ? / জাবেদা দাখিলা কি , কাকে বলে ?

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংঘটিত লেনদেনসমূহ লিপিবদ্ধকরণের সর্বপ্রথম পর্যায় হলো জাবেদা। জাবেদা ইংরেজি শব্দ Journal যা ফরাসি শব্দ ‘Jour’ হতে উৎপত্তি হয়েছে। Jour’ এর ফরাসি অর্থ হলো দিন। 

অর্থাৎ, দৈনন্দিন হিসাবের লেনদেনগুলো যে হিসাবের বইতে সর্বপ্রথম প্রাথমিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে জাবেদা বা Journal বলে। আরও বিস্তারিত ভাবে বললে কারবারি প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত লেনদেনসমূহ যে হিসাবের বইতে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী ডেবিট ও ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে তারিখের ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে জাবেদা বলে।

জাবেদার বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব

জাবেদার বৈশিষ্ট ও গুরুত্ব, Characteristics and Importance of Journal


জাবেদা হিসাব প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ। কারণ দেনদেন সংঘটিত হওয়ার পর সর্বপ্রথম প্রতিটি লেনদেনকে সংক্ষিপ্ত বিবরণীসহ ডেবিট ও ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে ধারাবাহিকভাবে জাবেদায় সংরক্ষণ করা হয়। জাবেদার বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো :

         ১। প্রাত্যহিক রেকর্ড বহিঃ জাবেদাকে প্রাত্যহিক রেকর্ড বহি বলা হয়। কারণ দৈনিক সংঘটিত লেনদেনসমূকে প্রতিদিন জাবেদাভুক্ত করা হয়। 

      ২। ধারাবাহিকতাঃ লেনদেনসমূহকে জাবেদায় তারিখ অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে পর পর লিখতে হয়। তাই জাবেদাকে হিসাবের ধারাবাহিক বহিও বলা হয়।

      ৩। খতিয়ানের সহায়ক বহিঃ হিসাবের খাত অনুযায়ী জাবেদায় লেনদেনসমূহকে লিপিবদ্ধ করা হয় বলে লেনদেনগুলোকে সহজে সংশ্লিষ্ট বিতয়ানে স্থানান্তর করা যায়। তাই জাবেদাকে খতিয়ানের সহায়ক বহিও বলা হয়।

      ৪। দ্বৈতসত্তার উল্লেখঃ দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী জাবেদায় প্রতিটি লেনদেনের সাথে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহকে ডেবিট ও ক্রেডিট করে লিখা হয়। হিসাবের প্রাথমিক বহি 

      ৫। হিসাবের প্রাথমিক বহিঃ ব্যবসায়ে সংঘটিত লেনদেনকে সর্বপ্রথম জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। তাই জাবেদাকে বলা হয়।

      ৬। বিভিন্ন ঘরে বিভক্তঃ জাবেদার প্রতিটি পৃষ্ঠাকে তারিখ, বিবরণ, খতিয়ান, পৃষ্ঠা, ডেবিট টাকা ও ক্রেডিট টাকা এ পাঁচটি পৃথক কলামে বিভক্ত করতে হয়।

      ৭। টাকার অংক লিখন : জাবেদায় সমপরিমাণ টাকার অংকে প্রতিটি লেনদেনকে ডেবিট ও ক্রেডিট করে লিখতে হয়।      

     ৮। বিভিন্ন জাবেদা বইয়ের ব্যবহার : ব্যবসায়ের আকার ও প্রকৃতি এবং লেনদেনের সংখ্যা বিবেচনা করে জাবেদাকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়।  

জাবেদাকে হিসাবের প্রাথমিক বই বলা হয় কেন ?

জাবেদাকে হিসাবের প্রাথমিক বই বলা হয় কেন ? Why Journal is Called Book of Prime Entry?

 কারবার প্রতিষ্ঠানসমূহে লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে লেনদেনগুলোকে তারিখ অনুযায়ী ডেবিট এবং ক্রেডিট বিশ্লেষণপূর্বক জাবেদা বইতে লিপিবদ্ধ করতে হয়। নিচে জাবেদাকে হিসাবের প্রাথমিক বই বলার কারণ ব্যাখ্যা করা হলো- 

জাবেদা হিসাবের প্রাথমিক বই কারণ 

যে কোনো লেনদেনকে প্রাথমিক অবস্থায় উক্ত লেনদেনের মধ্যস্থিত ডেবিট এবং ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে জাবেদা বইতে লিপিবন্ধ করা হয়। সর্বপ্রথম যে বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে হিসাবের প্রাথমিক বই বা Book of Prime Entry বলে। প্রাথমিকভাবে তারিখ অনুযায়ী লেনদেনগুলোকে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় বলে পরবর্তী অন্যান্য বই তৈরি করার সময় এটা সূত্র হিসেবে কাজ করে। যেহেতু লেনদেনসমূহ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে তারিখের ক্রমানুযায়ী সর্বপ্রথম জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়, সেহেতু জাবেদাকে প্রাথমিক হিসাব বহি বলা হয়।

জাবেদাকে সহকারী বই বলা হয় কেন ?

সহকারী বইঃ যে হিসাবের বই প্রধান হিসাব বইয়ের কাজ করে না এবং যা প্রধান হিসাব বইকে সাহায্য করে থাকে তাকে সহকারী বই বলে।

জাবেদা বইকে হিসাবের সহকারী বই বলার কারণ-

জাবেদায় লেনদেনসমূহকে প্রাথমিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। হিসাবরক্ষণ কার্যক্রমের ২য় পর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণির জাবেদার লিপিবদ্ধকৃত লেনদেনগুলোকে খতিয়ানে স্থানান্তর করা অপরিহার্য, সেহেতু পৃথক পৃথক শ্রেণিবিভক্ত জাবেদা হতে প্রত্যেকটি “লেনদেনকে স্থানান্তর করে খতিয়ানের দুটো হিসাবের একটির ডেবিট পার্শ্বে এবং অপরটির ক্রেডিট পার্শ্বে লিপিবদ্ধ করা হয়। লেনদেনগুলো তাদের প্রকৃতি অনুসারে প্রাথমিক পর্যায়ে শ্রেণিবিতক পৃথক পৃথক জাবেনায় লিপিবদ্ধ হয় বলে ২য় পর্যায়ে তাদেরকে পাকা খাতা খতিয়ানে স্থানান্তর সহজ এবং সুবিধাজনক হয়।

জাবেদার শ্রেনীবিভাগ

বিশেষ জাবেদা (Special Journal)

       বিশেষ জাবেদা হলো এমন একটি জাবেদা যাতে একই জাতীয় লেনদেন লিপিবন্ধ করা হয়। কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির লেনদেন যখন নির্ধারিত একটি জাবেদা বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় তখন ঐ জাবেনা বইকে বিশেষ জাবেদা বই বলে।  প্রতিটি লেনদেনের জন্য ডেবিট-ক্রেডিট এ বইতে উল্লেখ থাকে না।  

 কারবারি লেনদেনসমূহ পরীক্ষা করে এদেরকে প্রধানত চারটি গ্রুপে বিভক্ত করা যায়।

১। বিক্রয় জাবেদা (Sales Journal) : বাকিতে পণ্য বিক্রয় সংক্রান্ত লেনদেন যে জাবেদা বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে বিক্রয় জাবেদা বই বলে। নগদ প্রাপ্তি বা নগদ পণ্য বিক্রয় এ জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় না। বাকিতে সম্পত্তি বিক্রয় সাধারণ/প্রকৃত জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়।

২। ক্রয় জাবেদা (Purchase journal): কেবলমাত্র ধারে পণ্য ক্রয় সংক্রান্ত লেনদেনসমূহ যে জাবেদা বইতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে ক্রয় জাবেদা বা ক্রয় বই বলা হয়। ক্রয় জাবেদায় কেবল ব্যবসায়িক পণ্য ক্রয় লিপিবদ্ধ করা হয়, নগদ পণ্য ও সম্পত্তি ক্রয় এ জাবেদার অন্তর্ভুক্ত হয় না। 

৩। নগদ প্রদান জাবেদা (Cash payment journal) : নগদ প্রদান জাবেদায় সমস্ত নগদ প্রদান বা পরিশোধ অন্তর্ভুক্ত হয়। নগদ টাকা যেহেতু বিভিন্ন খাতে প্রদান করা হয় সেহেতু এতে অনেক টাকার ঘর থাকে। পাওনাদারদেরকে টাকা পরিশোধ, নগদ পরিশোধসমূহের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য দফ বিধায় Accounts payable-এর জন্য একটি Debit কলাম থাকে। অনেক পরিশোধের সাথে ক্রয় বাটা থাকে বলে Purchase discount নামে একটি Credit কলাম থাকে। চেকের মাধ্যমে এবং নগদ পরিশোধের জন্য Cash column নামে একটি Credit কলাম থাকে। ব্যবসায়ের প্রয়োজনে বহুবার অফিস সরবরাহ ক্রয় করতে হয় বলে Office supplies নামে আলাদা একটি ডেবিট কলাম থাকে। এছাড়াও অন্যান্য পরিশোধ দেখানোর জন্য Others accounts নামে একটি Debit কলাম থাকে।

৪। নগদ প্রাপ্তি জাবেদা (Cash receipts journal) :  নগদ প্রাপ্তি জাবেদায় সকল নগদ প্রাপ্তি লিপিবদ্ধ করা হয়। এতে নগদ বিক্রয়, দেনাদার হতে আদায় এবং অন্যান্য উৎস হতে নগন অর্থ পাওয়া গেলে; যেমন- ঋণ গ্রহণ করা হলে এবং সম্পত্তি বিক্রি করা হলে প্রভৃতি লিপিবদ্ধ করা হয়। একটি নগদ প্রাপ্তি জাবেদায় যে সকল টাকার কলাম থাকে সেগুলো হলো- ডেবিট কলাম- Cash এবং Discount, ক্রেডিট কলাম- Sales, Accounts receivable.

প্রকৃত জাবেদা  (Proper Journal)

যে সকল প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজার হাজার লেনদেন সংঘটিত হয় সে সকল প্রতিষ্ঠানে সকল জাবেদা একই বহিতে লিপিবদ্ধ করলে নানা জটিলতা দেখা দেয়।  কিন্তু কারবার প্রতিষ্ঠানে এমন কিছু লেনদেন সংঘটিত হয় যা বিশেষ জাবেদায় বা বহিতে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হয় না। 

যে সকল লেনদেন তাদের প্রকৃতিগত কারণে বিশেষ জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা যায় না সে সকল লেনদেন তারিখের ক্রমানুসারে কারণ উল্লেখপূর্বক যে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে প্রকৃত জাবেদা (Proper/ General Journal) বলে ।  নিচে যে সকল লেনদেন প্রকৃত জাবেনায় লিখা হয় তাদের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো : 

 

     ১। প্রারম্ভিক জাবেদা (Opening Journal): বিগত বছরের যাবতীয় সম্পদ ও দায় যে জাবেদার মাধ্যমে চলতি বছরে আনিত হয় তাকে প্রারম্ভিক জাবেদা বলে।

     ২। ভুল সংশোধনী জাবেদা (Rectifying Journal): হিসাবের মধ্যে ভুলত্রুটি থাকলে তা প্রকৃত জাবেদায় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সংশোধন করা হয়।

     ৩। স্থানান্তর জাবেদা (Transfer Journal): প্রকৃত জাবেদার মাধ্যমে প্রয়োজন বোধে এক হিসাব হতে অন্য হিসাবে স্থানান্তর করা যায়। 

     ৪। সমন্বয় জাবেনা (Adjusting Journal): রেওয়ামিল হতে চূড়ান্ত হিসাব তৈরির সময় অসমন্বিত খরচগুলোকেই প্রকৃত জাবেদার মাধ্যমে সমন্বয় করা হয়। 

     ৫। সমাপনী জাবেনা (Closing Journal): এই জাবেদার মাধ্যমে হিসাবকাল শেষে নামিক হিসাব সমূহের জের ক্রয়-বিক্রয় ও লাভ-লোকসান হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এর ফলে নাামিক হিসাবসমূহের জের বা Balance শূন্য হয়।

      উপরিউক্ত জাবেদা ছাড়াও বিলের প্রত্যাখ্যান, ধারে সম্পত্তি ক্রয়, মালিক কর্তৃক ব্যবসা হতে পণ্য গ্রহণের দাখিলা প্রকৃত জাবেদার মাধ্যমে লেখা হয়।