ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা- ১ম পত্র
অধ্যায়-১ ব্যবসায়ের মৌলিক ধারণা
অধ্যায়-২ ব্যবসায় পরিবেশ
অধ্যায়-৩ একমালিকানা ব্যবসায়
অধ্যায়-৪ অংশীদারি ব্যবসায়
অধ্যায়-৫ যৌথ মূলধনী ব্যবসায়
অধ্যায়-৬ সমবায় সমিতি
অধ্যায়-৭ রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়
অধ্যায়-৮ ব্যবসায়ের আইনগত দিক
অধ্যায়-৯ ব্যবসায়ে সহায়ক সেবা
অধ্যায়-১০ ব্যবসায় উদ্যোগ
অধ্যায়-১১ ব্যবসায়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
অধ্যায়-১২ ব্যবসায় নৈতিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা
ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা- ২য় পত্র
অধ্যায়-১ ব্যবস্থাপনার ধারণা
অধ্যায়-২ ব্যবস্থাপনার নীতি
অধ্যায়-৩ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ
অধ্যায়-৪ সংগঠিতকরণ
অধ্যায়-৫ কর্মীসংস্থান
অধ্যায়-৬ নেতৃত্ব
অধ্যায়-৭ প্রেষণা
অধ্যায়-৮ যোগাযোগ
অধ্যায়-৯ সমন্বয়সাধন
অধ্যায়-১০ নিয়ন্ত্রণ
Sunday, May 19

হিসাব বিজ্ঞান কাকে বলে ?
হিসাববিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও কার্যাবলি

Author – SABBIR HASAN        Date : 24/02/2023

এই পোস্টের বিষয়:  হিসাব বিজ্ঞান কাকে বলে ? হিসাববিজ্ঞান কি? হিসাব বিজ্ঞানের সংজ্ঞা । হিসাববিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য। হিসাববিজ্ঞানের গুরুত্ব। হিসাববিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা। হিসাববিজ্ঞানের কার্যাবলি। hisab biggan kake bole hisab biggan

হিসাব বিজ্ঞান কাকে বলে ?

হিসাব বিজ্ঞান কাকে বলে? | hisab biggan kake bole

সাধারণ অর্থে, হিসাববিজ্ঞান বলতে শৃংখলার সহিত নিয়মিতভাবে হিসাব রাখার কৌশলকে বুঝায় । হিসাববিজ্ঞান এর অর্থ হলো সুষ্ঠু , সুন্দর, সহজবোধ্য ও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেন বা ঘটনাসমুহকে হিসাবের বহিতে সুশৃংখলভাবে সংরক্ষণ করা যাতে ভবিষ্যতে যে কোন তারিখে প্রতিটি লেনদেন সম্পর্কে জানা যায় ।

হিসাববিজ্ঞান হলো এমন একটি তথ্য ব্যবস্থা যার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন সমূহকে সুষ্ঠূ ও সুন্দর পদ্ধতিতে লিপিবদ্ধকরণ, সংক্ষেপন ও বিশ্লেষণ নিশ্চিত করা যায়, ফলে একটি নির্দিষ্ট সময়য় পর আয়-ব্যয়, লাভ-ক্ষতি, সম্পদ-দায় ইত্যাদি সম্পর্কে ব্যখ্যা দান করা যায়। 

হিসাব বিজ্ঞান কাকে বলে

হিসাববিজ্ঞানের জনক লুকা ডি প্যাসিওলি। তিনি ১৪৯৪ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থ “সুম্মা ডি এরিথম্যাটিকা জিওমেট্রিকা এন্ড প্রপোরশনি এট প্রপোরশনালিটা” নামক গ্রন্থে হিসাব বিজ্ঞানের দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

হিসাববিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যাবলি

৬। হিসাববিজ্ঞান একই সাথে কলা ও বিজ্ঞান (Accounting is both a Science and Art) : হিসাববিজ্ঞান হলো কাজ সম্পাদনের কৌশল বা পদ্ধতি যা বিভিন্ন চেষ্টার ফসল। অন্যদিকে বিজ্ঞান হল পরীক্ষা-নিরীক্ষালব্ধ ও সুশৃঙ্খল জ্ঞান অর্জনের প্রক্রিয়া। হিসাববিজ্ঞানের এমন অনেক বিষয় আছে যা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির এবং সেগুলি বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগের সময়ও নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাই হিসাববিজ্ঞানকে কখনো কখনো বিজ্ঞান আবার কখনো কখনো কলা বলা হয়ে থাকে।  

৭। দ্বৈত সত্তা (Double Entity): প্রত্যেকটি লেনদেনের দুটি দিক বা সত্তা আছে, একে লেনদেনের দ্বৈতসত্তা বলে। লেনদেনের এই দ্বৈত সত্তা বিশ্লেষণ করে একটি পক্ষ বা হিসাবকে ডেবিট এবং আরেকটি পক্ষ বা হিসাবকে ক্রেডিট করে হিসাবের বইতে সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে লিপিবন্ধ করা হয়। 

৮। আর্থিক মানদণ্ডে লেনদেনের প্রকাশ (Expression of Transaction is Monetary Terms) : যে সব ঘটনাকে অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাণ করা যায় না এবং যেসব ঘটনা দ্বারা আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয় না সেগুলোকে অনার্থিক ঘটনা বলে। এব ঘটনা যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন এগুলো হিসাববিজ্ঞানের আওতায় বা হিসাবের বইতে আসে না। অর্থের মূল্যের নিরুপিত ঘটনাই লেনদেন এবং শুধুমাত্র সেগুলোই হিসাববিজ্ঞানের আওতাভুক্ত।

৯। সুশৃঙ্খল হিসাব সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি (A system of keeping accounts) : হিসাববিজ্ঞান আর্থিক লেনদেনগুলো সুশৃঙ্খলভাবে সংরক্ষণের একটি পদ্ধতি। যা ভবিষ্যতে রেফারেন্স হিসাবে আর্থিক ফলাফল সহজেই জানতে সাহায্য করে। 

১০। ব্যবস্থাপনার হাতিয়ার (Tools of management): হিসাববিজ্ঞান বিভিন্ন আর্থিক তথ্য সরবরাহ করে ব্যবস্থাপনাকে প্রয়োজনের সময় পরিকল্পনা, সংগঠন, নীতি নির্ধারণ, নিয়ন্ত্রণ, বাজেট প্রণয়ন ইত্যাদি কাজে সাহায্য করে থাকে। তাই হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবস্থাপনার হাতিয়ার (Tools of management) বলা হয়।

হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য

Characteristics of Accounting

হিসাববিজ্ঞানের মূল কাজ হল প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সঠিক তথ্য পরিবেশন করা। এসব তথ্যাবলির সাহায্যে তারা যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। নিম্নে হিসাববিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

১। হিসাববিজ্ঞান একটি কলা (Accounting is an Art): কলা হল সর্বোত্তম উপায়ে নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্যে পৌঁছানের একটি কৌশল বিশেষ। এক্ষেত্রে নিয়মশৃঙ্খলার অনুসরণ বাধ্যতামূলক নয়। হিসাববিজ্ঞান ব্যবসায়ের প্রতিদিনের লেনদেন সঠিকভাবে লিপিবদ্ধকরণের মাধ্যমে ব্যবসায়ের মূল লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। হিসাববিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ত্বকে বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগ করার জন্য কতগুলো বিশেষ নীতি ও পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছে। উক্ত নীতি ও পদ্ধতিকে কলা বলা হয়। সুতরাং হিসাববিজ্ঞান একটি কলা বিশেষ।

২। হিসাববিজ্ঞান একটি সামাজিক বিজ্ঞান (Accounting is a Social Science) : মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে সব মানুষ একসাথে বসবাস করে। সমাজ জীবনের প্রতিটি কর্মকান্ডে হিসাববিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।  ব্যাক্তি বা ব্যবসায়-বাণিজ্যের আর্থিক কার্যাবলির সঠিক ও সুশৃঙ্খল হিসাব তৈরি করা হিসাববিজ্ঞানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এটা সমাজ বহির্ভূত কোন কাজ নয় বরং সমাজ বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা (যেমন : গণিত শাস্ত্র, অর্থনীতি, দর্শন, পরিসংখ্যান ও মনোবিজ্ঞান ইত্যাদির) সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই হিসাববিজ্ঞান একটি সামাজিক বিজ্ঞান।

৩। হিসাববিজ্ঞান একটি তথ্য ব্যবস্থা (Accounting is an Information System): হিসাববিজ্ঞান হল আর্থিক ঘটনা ও তথ্য চিহ্নিতকরণ, পরিমাপ ও লিপিবদ্ধকরণ, শ্রেণীবিন্যাস ও সংক্ষিপ্তকরণ এর মাধ্যমে আর্থিক অবস্থা ও ফলাফল নির্ণয় করে থাকে। উক্ত আর্থিক তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের মধ্যে সরবরাহ করে থাকে। অর্থাৎ, বলা যায়  হিসাববিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য হল সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের নিকট আর্থিক তথ্য সরবরাহ করা। এভাবে হিসাববিজ্ঞান একটি তথ্যব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। 

৪। হিসাববিজ্ঞান আর্থিক ফলাফল প্রদান করে (Accounting Provides Financial Result): হিসাববিজ্ঞান সকল আর্থিক ঘটনা বা লেনদেনের সঠিক ও সুশৃঙ্খল হিসাব সংরক্ষণের একটি হাতিয়ার। দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির নিয়ম অনুসারে অতি সহজেই প্রয়োজনীয় হিসাব লিপিবদ্ধের মাধ্যমে ব্যবসায়ের ফলাফলগুলো নির্ধারণ করা যায় এবং আর্থিক বিবরণী প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা নেয়া যায়।

৫। হিসাববিজ্ঞান একটি বিজ্ঞান (Accounting is a Science): হিসাববিজ্ঞান আর্থিক ঘটনাগুলোকে হিসাবের বইতে যুক্তিসম্মত ও বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় লিপিবদ্ধ করে থাকে। ফলে প্রতিটি লেনদেনের প্রকৃতি ও কারণ বিশ্লেষণপূর্বক তার কালান্তিক ফলাফল নির্ণয় করা সহজ হয়। তাছাড়া আর্থিক ঘটনার পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ, শ্রেণীবিভক্তিকরণ ও অভিজ্ঞতা আহরণ ইত্যাদি কাজ প্রতিষ্ঠিত সূত্রের সাহায্যে অত্যন্ত সহজ ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পূর্ণ করা হয় বিধান হিসাববিজ্ঞানকে একটি বিজ্ঞান বলা হয় ।

হিসাব বিজ্ঞান

৬। ভুল ও জালিয়াতি প্রতিরোধ (Prevention of Error and Fraud): মানুষ মাত্রই ভুল হয়ে থাকে এবং মানুষ মাত্রই প্রতারণা করে থাকে। একটি প্রতিষ্ঠানে অত্যধিক ভুল ও জালিয়াতির কারণে প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক উন্নতি বাধান্ত হয়, কিন্তু বিজ্ঞান ও সুশৃঙ্খলভাবে হিসাব সংরক্ষণ করলে সহজেই প্রতিষ্ঠানের ভুল-ত্রুটি উদ্ঘাটন ও আলিয়াতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

৭। মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টি (Creation of value and Accountability): হিসাববিজ্ঞান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি পক্ষ তার উপর অর্পিত কাজের পূর্ণাঙ্গ হিসাব অন্য পক্ষকে প্রদান করে যার মাধ্যমে জবাবদিহিতার সৃষ্টি হয়। এই জবাব দিহিতার কারণে মানুষ অসদুপায় অবলম্বন, দুর্নীতি, জালিয়াতি ইত্যাদি খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে যার মাধ্যমে তার মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টি হয়। 

৮। দৈনন্দিন দেনা-পাওনার পরিমাণ জানা (Determination of daily Accounts Receivable and Accounts Payable) : হিসাবকাল শেষে একটি নির্দিষ্ট দিনে বা সময়ে প্রতিষ্ঠানের পৃথক পৃথক ও সমষ্টিগত মোট পাওনা এবং পৃথক ও সমষ্টিগত মোট দেনার পরিমাণ জানানো হিসাববিজ্ঞানের একটি উদ্দেশ্য। 

৯। গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই (Justification of Arithmetical Accuracy And Accounts) : দু’ফা দাখিলা পদ্ধতিতে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লেনদেনের হিসাব পক্ষসমূহকে যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় বিধায় হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা সহজ হয়।

হিসাববিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা / গুরত্ব / ভূমিকা

Importance / Significance of Accounting

ব্যবসায় বাণিজ্যে হিসাববিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম। কালের বিবর্তনে ব্যবসায় বাণিজ্য ব্যাপক সম্প্রসারণ লাভ করে বর্তমান পর্যায় এসেছে। এমনকি প্রতিনিয়ত ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যবসায়িক কর্মকন্ড অধিক হারে বৃদ্ধির ফলে হিসাবসংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সকল জটিলতা নিরসনে হিসাববিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

আধুনিক ব্যবসায়ে আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা নিম্নে আলোচনা করা হল : 

১। আর্থিক ফলাফল নির্ণয় (Determination of Financial Result) : মুনাফা অর্জন ব্যবসার প্রতিষ্ঠানের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য। নির্দিষ্ট সময়ান্তে এই উদ্দেশ্য কতটুকু অর্জিত হল তা জানার জন্য আয় ব্যয় বিবরণী (Income statement) প্রস্তুত করে লাভ বা ক্ষতি নির্ণয় করা হয়। সুতরাং আর্থিক ফলাফল নির্ণয়ে হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা রয়েছে।

২। আর্থিক অবস্থা প্রকাশ (Disclose of financial position) : কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা বলতে মূলত কোন নির্দিষ্ট তারিখে বা সময়ে ঐ প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তির বিপরীতে বহির্দায় ও মালিকানা স্বত্ব কতটুকু পরিমাণে বিদ্যমান তাকে নির্দেশ করে। উদ্বর্তপত্র (Statement of financial position / Balance sheet) এবং নগদ প্রবাহ বিবরণী (Cash flow statement) প্রস্তুত করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পায়।

৩। ব্যয় নিয়ন্ত্রণ (Cost control) : ব্যয় নিয়ন্ত্রণ বলতে ব্যয় একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখাকে বুঝায়। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বায় নিয়ন্ত্রণ মুনাফা সর্বোচ্চকরণের একটি অন্যতম মোক্ষম হাতিয়ার। হিসাববিজ্ঞানে বায় নিয়ন্ত্রণে আদর্শ যায় পদ্ধতিতে (Standard costing method) ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতিটি ব্যয়ের ক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত একটি আদর্শ (Standard) ব্যয় থাকে। পরবর্তীতে আদর্শ ব্যয় ও প্রকৃত ব্যয়ের ফলাফলের সাথে তুলনা করা হয়। এক্ষেত্রে প্রকৃত যায় যদি আদর্শ ব্যয় অপেক্ষা বেশি হয় তাহলে তার কারণ চিহ্নিত করে সমাধানমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪। নিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা ( Role in Decision Making) : বর্তমান ব্যবসায় পরিমণ্ডল অনেক পরিবর্তনশীল প্রতিযোগিতাপূর্ণ। এমতাবস্থায় সাফল্যের সাথে ব্যবসায় জগতে টিকে থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণে হিসাববিজ্ঞান ব্যবস্থাপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে থাকে। সুতরাং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম।

৫। ভুল ও জালিয়াতি প্রতিরোধ (Prevention of errors and fraud): কর্মীদের সম্পাদিত কার্যাবলি অনেক ভুল হয়ে থাকে আবার কখনো তারা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতারণা বা জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। হিসাববিজ্ঞান হিসাব প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মীগণ কর্তৃক সংগটিত ভুল ও জালিয়াতি প্রতিরোধ করে থাকে। 

৬। নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন (Formulation of policy & Preparation of Plan) : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি হল কার্যকর নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা প্রণয়ন। আর এ জন্য প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও অতীত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হয়। আর্থিক বিবরণীসমূহ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে হিসাববিজ্ঞান ব্যবস্থাপনাকে নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

৭। ব্যবস্থাপনার সহায়ক (Co-operation to management): হিসাববিজ্ঞান বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে ব্যবস্থাপনাকে সঠিকভাবে ব্যবসায় পরিচালনায় সহায়তা করে। এজন্য হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবস্থাপনার সহায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

৮। প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহার (Use as evidence): হিসাববিজ্ঞানে হিসাবরক্ষণ কাজে ভবিষ্যৎ ভুল সুঝাবুঝি এছানো ও নিরীক্ষার কাজে সহায়তার জন্য বিভিন্ন ধরনের ডকুমেনী (Document) সংরক্ষণ করা হয় যা পরবর্তীতে প্রমাণপত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। 

৯। আয়কর নিরূপন (Determination of income tax) : সুষ্ঠুভাবে হিসাব সংরক্ষণসহ আয় বিবরণী প্রস্তুতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নীট লাভ (ক্ষতি) নির্ধারণপূর্বক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল; আয়কর নির্ধারণ ও আয়কর প্রদানে হিসাববিজ্ঞান থাক গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

১০। তুলনামূলক বিশ্লেষণ (Comparative analysis) : আন্তঃ বিভাগে, আন্তঃ প্রতিষ্ঠান এমনকি সমজাতীয় অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুনাফা অর্জন ক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা পরিমাপের ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞান এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

১১। পণ্যমূল্য নির্ধারণ (Fication of Products Price): হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় নিরপণ করার পর তার সাথে কাঙ্খিত মুনাফা যোগ করে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করা হয়।

১২। মুলধন কাঠামো নির্ধারণ (Determination of capital structure): ব্যবসায় পরিচালনায় মূলধন হল জ্বালানিস্বরূপ। মূলধন হল যেকোন ব্যবসায়ের মূলভিত্তি। কোন কোন উৎস্য হতে মূলধনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করা হবে তাকে মূলধন কাঠামো বলে। হিসাববিজ্ঞান প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে সঠিক মূলধন কাঠামো নির্ধারণে ব্যবস্থাপনাকে সহায়তা করে। 

হিসাববিজ্ঞান একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে মূলধন কাঠামো নির্ধারণ থেকে শুরু করে মুনাফা অর্জন তথা চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো পর্যন্ত সবত্রই বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই একথা বলা যায় যে, আধুনিক ব্যবসায় বাণিজ্যে হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা বা গুরুত্ব অপরিসীম।

হিসাববিজ্ঞানের কার্যাবলি

Functions of Accounting

হিসাববিজ্ঞানের মূল ইনপুট (Input) হল লেনদেন। হিসাববিজ্ঞানের সকল কার্যাবলি লেনদেনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। একটি প্রতিষ্ঠানে লেনদেন সংগঠিত হওয়ার পর তা চিহ্নিতকরণ লিপিবন্ধকরণ, ও সবশেষে লেনদেনের বিশ্লেষণপূর্বক সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের নিকট সরবরাহ করা পর্যন্ত যে ধাপগুলো অতিক্রম করা হয় সেগুলোই মূলত হিসাববিজ্ঞানের মৌলিক কার্যাবলি।

১। লেনদেন চিহ্নিতকরণ (Identification of Transaction): হিসাববিজ্ঞানের সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হয় তা হলো লেনদেন চিহ্নিতকরণ। কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংগঠিত সকল ঘটনাগুলো অর্থের অংকে নিরূপণযোগ্যতা ও আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটা সাপেক্ষে লেনদেন হিসেবে চিহ্নিত করা।

২। লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ (Recording of Transaction) : এটি হিসাববিজ্ঞানের দ্বিতীয় কাজ। সঠিকভাবে লেনদেন চিহ্নিতকরণের পর ডেবিট ক্রেডিট বিশ্লেষণ করে তা হিসাবের বইতে প্রাথমিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়।

৩। লেনদেন শ্রেণীবদ্ধকরণ (Classifying of Transaction) : জাবেদায় লিপিবদ্ধকৃত লেনদেনগুলোকে তারিখ, প্রকৃতি ও খাত অনুযায়ী খতিয়ানে স্থানান্তর করা হিসাববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রতিটি লেনদেনের জন্য যে দুটি পক্ষ থাকে তার প্রত্যেকটির জন্য আলাদা আলাদা খতিয়ান হিসাব প্রস্তুত করা হয়। কখনোই এক শ্রেণীর হিসাব আর এক শ্রেণীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।

৪। লেনদেন সংক্ষিপ্তকরণ (Summarization of Transaction) : খতিয়ানে স্থানান্তরকৃত লেনদেন থেকে প্রাপ্ত হিসাবসমূহের ডেবিট ও ক্রেডিট জের বা উদ্বৃতগুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে একটি বিবরণী তৈরি করা হয় যাকে রেওয়ামিল বলা হয়। এটি আর্থিক বিবরণী তৈরির কাজকে সহজ করে দেয়।

৫। আর্থিক ফলাফল নির্ণয় (Determination of Financial Performance) : একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হল মুনাফা অর্জন। একটি নির্দিষ্ট সময় পর প্রতিষ্ঠানের এ উদ্দেশ্য কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা জানার জন্য আয়-ব্যয় বিবরণী (Income Statement) প্রস্তুত করা হয় এবং প্রস্তুতকৃত এই আয় ব্যয় বিবরণী মোট লাভ/ক্ষতি বা নীট লাভ/ক্ষতির পরিমাণ নির্দেশ করে।

৬। আর্থিক অবস্থা নির্ণয় (Determination of Financial Position): কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা বলতে মূলত কোন নির্দিষ্ট তারিখে বা সময়ে ঐ প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তির বিপরীতে বহিদায় ও মালিকানা স্বত্ত্ব কতটুকু অর্থাৎ তার অনুপাতকে বুঝায়, উদ্বর্তপত্র ও নগদ প্রবাহ বিবরণী তৈরির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা হয়। 

৭। আর্থিক তথ্য পৌঁছানো (Communication of financial information ) : হিসাববিজ্ঞান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীদের নিকট সরবরাহ করা হিসাববিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ, আর্থিক তথ্য ব্যবহারকারীদের কাছে সরবরাহ না করলে এর কোন উপযোগিতা পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ যখন আর্থিক তথ্য বিভিন্ন পক্ষসমূহকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হবে তখনই কেবল পূর্ববর্তী সকল কার্যাবলি অর্থবহ হবে। 

এছাড়াও ব্যবস্থাপকগণ সিদ্ধান্তগ্রহণ করতে গিয়ে অনেক কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকেন যা হিসাববিজ্ঞানের তথ্য সরবরাহের কারণেই হয়ে থাকে। তাই হিসাববিজ্ঞানের কিছু ব্যবস্থাপকীয় কাজও করতে হয় তা হলো- 

১। নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন (Formulation of policy and preparation of plan): নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কার্যকর নীতি নির্ধারণ, বর্তমান ও অতীত অবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা, আর্থিক বিবরণীসমূহ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করণের মাধ্যমে হিসাববিজ্ঞান ব্যবস্থাপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে।

২। বাজেট প্রণয়ন (Preparation of budget) : পরিকল্পনার সংখ্যাত্মক প্রকাশকে বাজেট বলে। প্রত্যেকটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য বাজেট প্রণয়ন অনস্বীকার্য। বাজেট প্রণয়ন করলে ভবিষ্যৎ আয় ব্যয়ের মধ্যে সামান্য বিধান ও নিয়ন্ত্রণ ও বছর শেষে তুলনামূলক বিশ্লেষণ সম্ভব হয়। বাজেট প্রস্তুতের ক্ষেত্রে হিসাবরক্ষক প্রয়োজনীয় আর্থিক তথ্য ব্যবস্থাপনাকে প্রদান করে এবং উক্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থাপনা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বাজেট তৈরি করে।

৩। ব্যয় নিয়ন্ত্রণ (Cost control) : ব্যয় নিয়ন্ত্রণ বলতে ব্যয়কে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখাকে বুঝায়। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ মুনাফা সর্বোচ্চকরণের একটি মোক্ষম হাতিয়ার। ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতিটি ব্যয়ের ক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত একটি আদর্শ ব্যয় (Standard cost) থাকে। আর আদর্শ ব্যয় নির্ণীত হয় অতীত তথ্য ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। পরবর্তীতে আদর্শ ব্যয় ও প্রকৃত ব্যয়ের ফলাফলের তুলনা করা হয়। এক্ষেত্রে যদি প্রকৃত ব্যয় আদর্শ বায় অপেক্ষা বেশি হয় তাহলে এর কারণ চিহ্নিত করে সমাধানমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। 

৪। কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন (Evaluation of worker’s performance) : কর্মীগণ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে কিনা তা জানা খুবই জরুরি। কর্মীদের মূল্যায়নের জন্য কিছু তথ্য যেমন প্রত্যেক কর্মীর উৎপাদনের পরিমাণ, সময়, উপস্থিতি ইত্যাদি প্রয়োজন হয় যা সরবরাহ করা হিসাববিজ্ঞানের কাজ। 

৫। ভুল ও জালিয়াতি প্রতিরোধ (Prevention of error and fraud): কর্মীদের সম্পাদিত কার্যাবলি অনেক সময় ভুল আবার অনেক সময় তারা ইচ্ছা করে প্রতারণা বা জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। হিসাববিজ্ঞানের কাজ হল প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবস্থাপনাকে সহায়তা করা।

৬। তহবিলের উৎস নির্ধারণ (Determination of sources of fund) : মূলধনকে একটি প্রতিষ্ঠানের জ্বালানি শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু মূলধনের ব্যবহারও প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবমুক্ত নয়। তাই যে উৎসের মূলধন ব্যয় অপেক্ষাকৃত কম হবে, সেখান থেকেই তহবিল সংগ্রহ করা উচিত। হিসাববিজ্ঞান ব্যবস্থাপনাকে মূলধন ব্যয় (Cost of capital) ও উৎস সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করে থাকে।

৭। পণ্যমূল্য নির্ধারণ (Determination of Product’s Price): হিসাববিজ্ঞান পণ্যের উৎপাদন ব্যয় নিরূপণ করার পর তার সাথে কাঙ্খিত মুনাফা যোগ করে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে থাকে। 

ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লেনদেনগুলোকে চিহ্নিত করা, লিপিবদ্ধ করা, এবং বিভিন্ন পক্ষকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করার লক্ষ্যে সময়মতো আর্থিক তথ্য সরবরাহ করাই হিসাববিজ্ঞানের প্রধান কাজ।