হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করার আগে আমাদের জানতে হবে —
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট কাকে বলে ?
প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মী তথা মানব সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়ে ব্যবস্থাপনার যে অংশ কাজ করে তাকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বলে। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মী সংগ্রহ, নির্বাচন ও নিয়োগ, উন্নয়ন, কর্মীদের কাজে উদ্বুদ্ধকরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সাথে সম্পর্কিত ।
মানব সম্পদ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের চালিকাশক্তি । তাই প্রতিষ্ঠান এ সম্পদের বাছাই, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, বেতন ও মজুরি প্রদান, প্রেষণা ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান, কর্মীদের অভিযোগ নিরসন, কর্মীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিষয়সমূহ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পাদন করা হয় তাকে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট হিসেবে অভিহিত করা যায় ।
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর প্রয়োজনীয়তা !
উৎপাদনের চারটি উপকরণ তথা – ভুমি, মূলধন, জনশক্তি ও সংগঠন এর মধ্যে জনশক্তি বা হিউম্যান রিরোর্স অন্যতম একটি উপাদান । হিউম্যান রিসোর্স থাকলেই হয় না তাদেরকে সঠিকভাবে পরিচালনা না করলে প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌছানো সম্ভব না । আর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর প্রয়োজনীয়তা এখানেই । হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য কর্মী সংগ্রহ ও এর যথাযথ সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করে লক্ষ্য অর্জনে ভুমিকা রাখে । হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা নিচে করা হলো –
১. উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা (Help to achieve objective): কর্মী হচ্ছে কোনো প্রতিষ্ঠানের সমুদয় কাজকে সচল রাখার প্রধান হাতিয়ার। লক্ষ্য অর্জনের সিঁড়ি বা মাইলফলককে বলা হয় উদ্দেশ্য। সঠিক সময়ে প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত উদ্দেশ্য অর্জন করতে কর্মীসংস্থানের ভূমিকা রয়েছে। এর মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মীর সংস্থান হয়ে থাকে, যারা উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করে থাকে।
২. প্রয়োজনীয় কর্মী নিয়োগ (Appointing necessary employee): যেকোনো কাজ পরিচালনার জন্য প্রথমেই যা প্রয়োজন সেটি হচ্ছে দক্ষ ও যোগ্য কর্মী। সেই কাজ পরিচালনা করতে হলে কতজন কর্মী প্রয়োজন তা কোথায় থেকে সংগ্রহ করা হবে এবং প্রয়োজনীয় কর্মীর নিয়োগ দান হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমেই করা হয় ।
৩. উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন (Selecting qualified employee): সংগঠনের জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের পূর্বশর্ত হচ্ছে উপযুক্ত কর্মী নির্বাচন । কাজেই বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে সর্বোত্তম কর্মী নির্বাচন করা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের কাজ ।
৪. উৎপাদন চালু রাখা (Dynamism of production): প্রতিষ্ঠানের প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে কর্মী। শারীরিক পরিশ্রমে হোক বা যন্ত্রের মাধ্যমে হোক, কর্মী ছাড়া উৎপাদন প্রক্রিয়া চালু রাখা মোটেই সম্ভব নয়। উৎপাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে কর্মীসংস্থান প্রক্রিয়া কর্মীর যোগান দানের মাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৫. সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার (Proper utilization of resource): স্বল্প সময়ে পরিমিত কাঁচামাল ব্যবহার করে সর্বোচ্চ উৎপাদন অর্জন সম্ভব হলে সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার হয়ে থাকে। কর্মীসংস্থানের মাধ্যমে মানবসম্পদ ও অন্যান্য সম্পদের সর্বোত্তম এবং কাঙ্ক্ষিত ব্যবহার নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ফলপ্রসূ করা সহজতর হয়।
৬. কর্মী ও কাজের সমন্বয় (Coordination between employee and task): কর্মীসংস্থান, কাজ ও কর্মীর মধ্যে সমন্বয়সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একদিকে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী পেয়ে থাকে, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হয়। এভাবে দেশের মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহার সম্ভব হয়।
৭. প্রশিক্ষণ (Training): কর্মীসংস্থান প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রশিক্ষণ । এর দ্বারা কর্মীদের পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেইসাথে কর্মীদের মনোভাবে স্থায়ী ও ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়। এতে তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের কাজ সহজতর হয়।
৮. মূল্যায়ন (Evaluation): কর্মীসংস্থানের একটি মূল্যবান উপাদান হচ্ছে মূল্যায়ন। কর্মীসংস্থান প্রক্রিয়ায় মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মীর দক্ষতা, যোগ্যতা, কাজের সক্ষমতা প্রভৃতি বাছাই করে তার স্বাতন্ত্র্যতা পরীক্ষা করা সহজ হয়। এতে ভবিষ্যতে উক্ত মূল্যায়নের ফলাফলের ভিত্তিতে পদোন্নতি দান করা যায়।
৯. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি (Increasing productivity): কর্মীসংস্থান মানবসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে কর্মীর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে যথেষ্ট অবদান রাখে। কর্মীদের দক্ষতা ও মেধাশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। এ উৎপাদনশীলতা মানসম্মত বা আশানুরূপ না হলে লক্ষ্য অর্জন ব্যর্থ হয়।
১০. কর্মী সংগ্রহ (Recruitment): কর্মী সংগ্রহ হলো প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সম্ভাব্য কর্মীদের উপস্থিত করা। কর্মীসংস্থানের মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহের সমুদয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কর্মীসংস্থান প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে উৎস সম্পর্কে সিন্ধান্ত গ্রহণ করে কর্মী সংগ্রহ পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয় এবং সে মোতাবেক প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী সংগ্রহ করা হয়।
১১. চাহিদা নির্ধারণ (Determining demand): প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগ ও উপবিভাগে কোন ধরনের কত সংখ্যক কর্মী আবশ্যক তা ঠিক করে। প্রতিষ্ঠানের কাজের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকৃতির যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীর আবশ্যক হয়। কোন বিভাগে, কোন পদে কতসংখ্যক কর্মী আবশ্যক তা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে অবগত হওয়া যায়।
১২. মানবসম্পদ উন্নয়ন (Human resources development) : হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে জনশক্তি উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ, বদলি, পদোন্নতি, পদাবনতিসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। মানবসম্পদ উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের কাজ ।
FAQs
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট কি ?
প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মী তথা মানব সম্পর্কিত বিষয়াদি নিয়ে ব্যবস্থাপনার যে অংশ কাজ করে তাকে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বলে।
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বাংলা কি ?
উত্তর: মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ।
human resource management bangla –
উত্তর : মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা ।
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর প্রয়োজনীয়তা কি ?
প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হলে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।