আজকে আমরা কথা বলবো প্রেসার লো হলে করণীয় কী? আমরা অনেকেই মনে করি শুধু শরীর দুর্বল হলেই লো প্রেসার হয় আসলে কথাটা সত্যি নয় । প্রেসার লো অনেক কারণেই হতে পারে , আমরা সেগুলো নিয়েই আলোচনা করবো। প্রেসার লো হলে করণীয় কী – এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার আগে আমরা জেনে নেই লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন কি ?
নিম্ন রক্তচাপ কি ?
নিম্ন রক্তচাপ, যা হাইপারটেনশন নামেও পরিচিত। যখন আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক সীমার নিচে নেমে যায় তখন তাকে নিম্ন রক্তচাপ বলে ।
হৃৎপিণ্ড ধমনী দিয়ে শরীরের সমস্ত অংশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত পাম্প করে । এই প্রক্রিয়ায়, রক্ত রক্তনালীগুলির দেয়ালে ধাক্কা দেয় এবং এটিকে পাম্প করার জন্য যে পরিমাণ চাপ প্রয়োজন তাকে রক্তচাপ বলে। রক্তচাপ খুব বেশি হলে রক্তের প্রবাহ রক্তনালীর দেয়ালে বেশি চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং কিডনির ক্ষতি হতে পারে।
একইভাবে, রক্তচাপ খুব কম হলে, এটি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলিতে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করতে পারে না । যদিও নিম্ন রক্তচাপ সবসময়ই ভালো, তবে চিকিৎসা না করা হলে রোগী গুরুতর অবস্থায় ভুগতে পারে। নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণগুলি প্রায়শই খুব একটা দেখা যায় না, তবে রক্তচাপের সঠিক পরিমাপ পেতে, রোগীকে একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে যেতে হবে বা স্ফিগমোম্যানোমিটার ব্যবহার করতে হবে ।
অনেক ক্ষেত্রে, নিম্ন রক্তচাপ কোনো উপসর্গ সৃষ্টি করে না এবং এটি উদ্বেগের কোন কারণও নয়। কিছু ক্ষেত্রে, এটি উপসর্গ সৃষ্টি করে যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে প্রতিফলিত হয় । যদিও নিম্ন রক্তচাপ সাধারণত উচ্চ রক্তচাপের মতো ক্ষতিকারক নয়, তবুও নিম্ন রক্তচাপের কিছু লক্ষণ আমরা দেখতে পাই এবং কিছু ক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
রক্তচাপের স্বাভাবিক পরিসীমা সাধারণত 120/80 mmHg এর কম বলে মনে করা হয়। যখন এই রক্তচাপ কমে 90/60 mmHg তে নেমে আসে তখন আমরা তাকে নিম্ন রক্তচাপ হিসাবে বিবেচনা করি কিন্তু এটি ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। সাধারণভাবে, রক্তচাপ যা 90/60 mmHg এর চেয়ে কম থাকে তাকে কম বলে মনে করা হয় ।
নিম্ন রক্তচাপের কিছু সাধারণ কারণ
নিম্ন রক্তচাপ শরীরকে দুর্বল করে দেয় । নিম্ন রক্তচাপের কিছু সাধারণ কারণ নিচে আলোচনা করা হলো:
ডিহাইড্রেশন: যখন আপনার শরীর থেকে অত্যধিক তরল বেরিয়ে যায়, তখন আপনার রক্তচাপ হ্রাস হতে পারে । প্রচন্ড গরমে বা ডাইরিয়া বা অন্য কোন কারণে যখন শরীর থেকে অধিক পরিমাণে পানি বের হয়ে যায় তখন তাকে আমরা ডিহাইড্রেশন বলে । এই ডিহাইড্রেশনের কারণে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে ।
রক্তের ক্ষয়: দৈনন্দিন অনেক কাজে আমরা দুর্ঘটনায় পরে রক্তের ক্ষয় হয়র থাকে। অস্ত্রোপচারের সময় বা আঘাতের পরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রক্ত হারানোর ফলে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে ।
ওষুধ: কিছু ওষুধ, যেমন মূত্রবর্ধক, আলফা ব্লকার এবং বিটা ব্লকার, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে নিম্ন রক্তচাপের কারণ হতে পারে । কিছু ঔষধের পার্শপ্রতিক্রিয়া হিসেবে নিম্ন রক্তচাপ হতে পারে ।
হার্টের অবস্থা: কিছু হার্টের অবস্থা, যেমন ব্র্যাডিকার্ডিয়া (একটি ধীর হৃদস্পন্দন) বা হার্টের ভালভের সমস্যা, নিম্ন রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
এন্ডোক্রাইন ডিসঅর্ডার: অ্যাড্রিনাল অপ্রতুলতা বা হাইপোথাইরয়েডিজমের মতো ব্যাধি নিম্ন রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থা: গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে নিম্ন রক্তচাপ খুব সাধারণ একটি বিষয়। বিশেষ করে প্রথম কয়েক মাস নিম্ন রক্তচাপ বেশি হয়ে থাকে ।
আরও পড়ুন >>>জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটা ভালো ?
নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গগুলির মধ্যে মাথা ঘোরা, হালকা মাথাব্যথা, অজ্ঞান হওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া এবং ক্লান্তি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। আপনি যদি এই লক্ষণগুলি অনুভব করেন তবে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার নিম্ন রক্তচাপের কারণের উপর নির্ভর করে, চিকিত্সার মধ্যে জীবনযাত্রার পরিবর্তন, ওষুধ বা অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থার চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
লো প্রেসারের লক্ষণ
নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গগুলির মধ্যে মাথা ঘোরা, হালকা মাথাব্যথা, অজ্ঞান হওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া এবং ক্লান্তিভাব হতে পারে । আপনি যদি এই লক্ষণগুলি অনুভব করেন তবে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন ।
মাথা ঘোরা: হালকা মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরা বোধ করা নিম্ন রক্তচাপের একটি সাধারণ লক্ষণ। আপনি যখন দ্রুত উঠে দাঁড়ান তখন মাথা ঘোরা হতে পারে এবং আপনি পরেও যেতে পারেন ।
অজ্ঞান হওয়া: কিছু ক্ষেত্রে, নিম্ন রক্তচাপ আপনাকে অজ্ঞান করে ফেলতে পারে বা মনে হতে পারে যে আপনি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন।
ঝাপসা দৃষ্টি: নিম্ন রক্তচাপের কারণে আপনার দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে বা কোন কিছুর দিকে তাকাতে অসুবিধা হতে পারে ।
ক্লান্তি: ক্লান্তি নিম্ন রক্তচাপের একটি সাধারণ ব্যাপার। ক্লান্তি বা ক্লান্তি বোধ করা নিম্ন রক্তচাপের একটি লক্ষণ হতে পারে।
বমি বমি ভাব: নিম্ন রক্তচাপের কারণে বমি বমি ভাব বা অস্থিরতার অনুভূতি হতে পারে ।
দ্রুত বা অগভীর শ্বাস-প্রশ্বাস: দ্রুত বা অগভীরভাবে শ্বাস নেওয়া নিম্ন রক্তচাপের আরও একটি লক্ষণ হতে পারে।
ফ্যাকাশে ত্বক: নিম্ন রক্তচাপের কারণে আপনার ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে ।
এটি অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, এই উপসর্গগুলির মধ্যে অনেকগুলি অন্যান্য অবস্থার কারণেও হতে পারে এবং নিম্ন রক্তচাপের সব রুগী এই উপসর্গগুলি অনুভব করবে না। আপনি যদি এই উপসর্গগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন, বিশেষ করে যদি সেগুলি গুরুতর বা স্থায়ী হয়, তাহলে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ।
নিম্ন রক্তচাপ, বা হাইপোটেনশনের চিকিৎসা
নিম্ন রক্তচাপ, বা হাইপোটেনশনের চিকিৎসা এর অন্তর্নিহিত কারণের উপর নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনলেই নিম্ন রক্তচাপ হতে মুক্তি পাওয়া যায় । আবার কিছু ক্ষেত্রে ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজন হতে পারে । নিম্ন রক্তচাপের কিছু চিকিৎসা সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল:
তরল গ্রহণ বাড়াতে হবে: যদি আপনার নিম্ন রক্তচাপ ডিহাইড্রেশনের কারণে হয়, তাহলে আপনার তরল গ্রহণ বাড়ানো আপনার রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন কমপক্ষে 8 (আট) থেকে 10 (দশ) গ্লাস পানি পান করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা দিয়ে থাকেন । এছাড়াও আপনি ক্রীড়া পানীয় বা ইলেক্ট্রোলাইট ধারণকারী অন্যান্য তরল পান করতে পারেন।
লবণ খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে: লবণ শরীরে তরল ধরে রেখে রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অত্যধিক লবণ স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে, তাই আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্য উপযুক্ত পরিমাণে লবণ গ্রহণ করা প্রয়োজন ।
এক্ষেত্রে স্যালাইন বা ডাবের পানি পান করতে পারেন যা খুব ভালো কাজে দেয় ।
পায়ে কম্প্রেশন স্টকিংস পরুন: কম্প্রেশন স্টকিংস আপনার পায়ে রক্ত জমা হওয়া থেকে রক্ষা করতে এবং আপনার রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এই স্টকিংসগুলি আপনার পা এবং পায়ের শিরাগুলিতে রক্ত চলাচলে অতিরিক্ত সহায়তা প্রদানের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা শরীরের উপরের অংশে রক্ত প্রবাহ বাড়াতে সহায়তা করে।
ওষুধ: নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন- ফ্লুড্রোকর্টিসোন এমন একটি ওষুধ যা শরীরে লবণ এবং তরলের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তচাপ বাড়াতে পারে। মিডোড্রিন একটি ওষুধ যা রক্তনালীকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে, যা রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে । পাইরিডোস্টিগমাইন একটি ওষুধ যা হৃৎপিণ্ড এবং রক্তনালী নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুর কার্যকলাপ বাড়ায়।
কখন নিম্ন রক্তচাপের জন্য চিকিৎসকের কাছে যাবেন
নিম্ন রক্তচাপ দ্বারা সৃষ্ট বেশিরভাগ উপসর্গগুলি শুধুমাত্র অল্প সময়ের জন্য দেখা যায় এবং প্রায়শই এমনিই ঠিক হয়। যাইহোক, যখন লক্ষণগুলি দীর্ঘ সময়ের জন্য দেখা দেয়, তখন অবস্থার তীব্রতা এবং কি করতে হবে তা বোঝার জন্য একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা অপরিহার্য।
প্রেসার লো হলে করণীয় কী – এই সম্পর্কে সচরাচর মানুষ যা জানতে চায় –
১. প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা হয় ?
প্রেসার লো হলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তিভাব, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড় করা, অবসাদ, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা ও স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা দেখা দেয়।
২. প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে ?
দ্রুত প্রেসার বাড়াতে ওআরএস – Oral rehydration solutions (ORS), স্যালাইন, কফি, ডাবের পানি, ডিম, দুধ, ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার , মাংস, বাদাম প্রভৃতি দ্রুত প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে ।
৩. লো প্রেসারের ওষুধের নাম ?
লো প্রেসারের কোনও ওষুধ নেই, যা সাথে-সাথে প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে । লো প্রেসারের প্রতিকারে ওআরএস – Oral rehydration solutions (ORS) খাওয়াতে হবে। রোগী ওআরএস খেতে না পারলে, স্যালাইন বা ডাবের পানি দিতে হবে । বাড়িতে নুন জল মিশিয়ে স্যালাইন তৈরি করেও খাওয়ানো যেতে পারে ।
৪. লো প্রেসারের ঔষধের নাম ?
লো প্রেসারের কোনও ওষুধ নেই, যা সাথে-সাথে প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে । লো প্রেসারের প্রতিকারে ওআরএস – Oral rehydration solutions (ORS) খাওয়াতে হবে। রোগী ওআরএস খেতে না পারলে, স্যালাইন বা ডাবের পানি দিতে হবে । বাড়িতে নুন জল মিশিয়ে স্যালাইন তৈরি করেও খাওয়ানো যেতে পারে ।
৫. লো প্রেসার হলে কি কি ফল খাওয়া উচিত ?
রক্তচাপ বাড়ানোর জন্য যে ফলগুলি খাওয়া যেতে পারে তার মধ্যে রয়েছে কলা, আপেল, নাশপাতি, এপ্রিকট, আঙ্গুর, কিশমিশ, কিউই, আম, তরমুজ, ডালিম, বরই, ছাঁটাই, অ্যাভোকাডো, ক্যান্টালুপ, মধু, তরমুজ, টমেটো, সাইট্রাস ফল, বেরি প্রভৃতি ।
৬. লো প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত ?
দ্রুত প্রেসার বাড়াতে ওআরএস – Oral rehydration solutions (ORS), স্যালাইন, কফি, ডাবের পানি, ডিম, দুধ, ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার , মাংস, বাদাম প্রভৃতি দ্রুত প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে ।
৭. লো প্রেসারের লক্ষণ কি কি ?
লো প্রেসারের লক্ষণ তেমন একটা দেখা যায় না । প্রেসার লো হলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তিভাব, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বমি বমি ভাব, বুক ধড়ফড় করা, অবসাদ, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা ও স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে অসুবিধা দেখা দেয়।
৮. লো প্রেসার কত হলে হয় ?
একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশেপাশে থাকে তাহলে তা লো ব্লাড প্রেসার হিসেবে ধরা হয়।