আপনারা অনেকেই জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটা ভালো ? এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে থাকেন । আসলে আমাদের এই বিষয়টি খুব ভালোভাবে জেনে রাখা উচিত কারণ অনিয়ন্ত্রিত গর্ভধারণ আমাদের জীবনে নানা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে । তাই এই পোস্টটি পুরোটা পড়ুন আর জানুন জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে আর কোনটি ভালো সেই সম্পর্কে ।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
জন্ম নিয়ন্ত্রণ বা গর্ভবিরতিকরণ বা গর্ভনিরোধ হলো এমন কিছু পদ্ধতি বা কর্মপ্রক্রিয়া যা গর্ভধারণ প্রতিরোধে বা সন্তান প্রসব থেকে বিরত রাখে । অর্থাৎ জন্মনিয়ন্ত্রন হলো সন্তান প্রসব থেকে বিরত থাকার কৈশল ।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যক্তিগত চাহিদা এবং পছন্দের উপর নির্ভর করে । পদ্ধতিগুলির নির্ভরযোগ্যতা, ব্যবহারের সুবিধা, স্থায়ীত্ব এবং অন্যান্য কারণে একেক জনের কাছে একেক পদ্ধতি পছন্দনীয় । জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির অনেক অপশন আছে বেশিরভাগই অত্যন্ত কার্যকরী যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় ।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বেছে নেওয়ার সময় কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে:
- নিজের এবং আপনার পার্টনারের সার্বিক স্বাস্থ্য
- ভবিষ্যতে সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা
- যৌন ক্রিয়ার ফ্রিকোয়েন্সি
- জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোর নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা
- যৌনবাহিত সংক্রমণ (STIs) থেকে সুরক্ষা
- নিজের পছন্দ
এই আর্টিকেলে আমরা প্রাকৃতিক এবং অন্যান্য পদ্ধতি সহ বিভিন্ন ধরণের জন্মনিয়ন্ত্রণ নিরাপত্তা, কার্যকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি দেখবো এবং সবচেয়ে ভালো পদ্ধতিটি বেছে নেব ।
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটা ভালো
জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো হলো পুরুষদের ক্ষেত্রে ভেসকটমি এবং নারীদের ক্ষেত্রে টিউবাল বন্ধ্যাকরণ । এছাড়াও অরও অনেক পদ্ধতি আছে । নিচে ভালো পদ্ধতির ক্রমানুসারে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
১. ভেসকটমি : পুরুষদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো ভেসকটমি । এটি স্থায়ী গ্ররভনিরোধের জন্য ব্যবহার করা হয় । অস্ত্রপচারের মাধ্যমে পুরুষের শুক্রানু বহনকারী নালিকা কেটে দেওয়া হয় বা সিল করে দেওয়া হয় যাতে শুক্রানু যৌন মিলনের সময় ডিম্বানুতে না পৌছায় । এই অস্ত্রপচারটি খুব জটিল কিছু না খুবই ছোট এবং এটি করতে হাস্পাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না ।
এই পদ্ধতিটি নিসঃসন্তান ব্যাক্তিদের জন্য নয় কারণ এটি স্থায়ী জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটি কৌশল যা পুরুষের পিতৃত্বের সম্ভাবনা স্থায়ীভাবে হ্রাস করে ।
২. টিউবাল লাইগেশন বা বন্ধ্যাকরণ: মহিলাদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো টিউবাল লাইগেশন । এটি স্থায়ী গ্রর্ভনিরোধের জন্য ব্যবহার করা হয় । অস্ত্রপচারের মাধ্যমে মহিলাদের ফ্যালোপিয়ান টিউবগুলি কেটে, বেধে বা অবরুদ্ধ করে স্থায়ীভাবে গর্ভাবস্থা রোধ করা যায় । শুক্রাণুকে ফ্যালোপিয়ান টিউব থেকে ডিম্বাণুতে যেতে বাধা দেয়। পদ্ধতিটি আপনার মাসিক চক্রকে প্রভাবিত করে না ।
৩. জন্মনিরোধক পিল বা বড়ি : জন্মনিরোধক পিলে “ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টিন” বা শুধু প্রোজেস্টিন হরমোনের সংমিশ্রণ থাকে। সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এটি 99% কার্যকর। যৌন মিলনের পূর্বে অথবা পরে এটি সেবন করা যায়। অনেক ধরনের জন্মনিরধোক পিল বাজারে পাওয়া যায় । এই পিল প্রতিদিন সেবন করতে হয় রুটিন অনুযায়ী ।
৪. কনডম: কনডম জন্মনিরোধের আরও একটি ভালো এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি । এই কনডম দুই প্রকারের হয়ে থাকে যথা পুরুষ কনডম আর মহিলা কনডম । পুরুষ কনডম বেশি প্রচলিত ও কার্যকরী ।
পুরুষ কনডম: ল্যাটেক্স, পলিউরেথেন এবং পলিসোপ্রিন থেকে তৈরি একটি পুরুষ বা বাহ্যিক কনডম গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করতে পারে এবং STI অর্থাৎ বিভিন্ন যৌনসংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। যৌন সঙ্গমের পুর্বে এটি পুরুষ যৌনাজ্ঞে পরতে হয় ।
মহিলা কনডম: মহিলা বা অভ্যন্তরীণ কনডম গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করতে পারে এবং এইচআইভি এবং অন্যান্য যৌনবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে ।
৫. গর্ভনিরোধক স্পঞ্জ: এই স্পঞ্জটি প্লাস্টিকের ফোম দিয়ে তৈরি । এই স্পঞ্জে শুক্রাণু নাশক থাকে । সঙ্গমের পূর্বে এই স্পঞ্জটি যোনিতে ঢোকাতে হয় আর স্পঞ্জে থাকা ঔষুধ শুক্রানু ধ্বংস করে গর্ভনিরোধ করে ।
৬. ডায়াফ্রাম: ডায়াফ্রামগুলি হল অগভীর সিলিকন কাপ যেখানে শুক্রাণুনাশক থাকে বা শুক্রাণুনাশকের সাথে ব্যবহার করতে হয় । গর্ভাবস্থা রোধ করতে যোনিতে ডায়াফ্রাম প্রবেশ করতে হয় । প্রতিবার নিখুঁতভাবে ব্যবহার করা হলে, একটি ডায়াফ্রাম গর্ভাবস্থা প্রতিরোধে 92-96% কার্যকর। গর্ভাবস্থা রোধ করতে ডায়াফ্রামটিকে যৌনমিলনের পরে কমপক্ষে 6 ঘন্টা যোনিতে থাকতে হবে, তবে সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে এটি 24 ঘন্টার বেশি শরীরে থাকা উচিত নয় । কেও যদি আবার সহবাস করতে চান এবং ডায়াফ্রামটি 3 ঘন্টার বেশি সময় ধরে থাকে তবে তাকে আরও শুক্রাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে।
৭. স্পার্মিসাইড: শুক্রাণু নাশক শুক্রাণু হত্যা করে গর্ভাবস্থা রোধ করে। এগুলি ফোম, জেল, ক্রিম, ফিল্ম, সাপোজিটরি এবং ট্যাবলেট। একটি স্পার্মিসাইড বাধা পদ্ধতির কার্যকারিতা বাড়াতে পারে, যেমন কনডম এবং ডায়াগ্রাম। স্পার্মিসাইড ব্যবহার করা সহজ এবং ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। এটি বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়ও নিরাপদ এবং হরমোনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে না। যাইহোক, কিছু লোকের অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া বা জ্বালা হতে পারে।
৮. ইনজেকশন: প্রতি 3 মাস পর পর এই ইনজেকশন নিতে হয় । এই ইনজেকশন গর্ভাবস্থা রোধ করতে প্রোজেস্টিন নামক হরমোন ব্যবহার করে থাকে । সঠিকভাবে ব্যবহার করা হলে এটি 96% পর্যন্ত জন্মনিরোধ করতে পারে ।
প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
কোন ধরনের ঔষধ বা আধুনিক পদ্ধতি ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রন করা যায় । প্রাকৃতিক জন্মনিয়ন্ত্রণের জনপ্রিয় দুইটি পদ্ধতি হলো ক্যালেন্ডার পদ্ধতি ও পুলআউট পদ্ধতি ।
১. ক্যালেন্ডার পদ্ধতি : মহিলাদের ঋতু স্বাভাবিক নিয়মেই নিয়মিত হয়ে থাকে । যাদের অনিয়মিত পিরিয়ড হয় তাদের জন্য এই পদ্ধতি না ব্যবহার করায় ভালো । এই পদ্ধতিতে এমন কিছুদিন রয়েছে যা নিরাপদ দিন বা সেফ পিরিয়ড ডে বলা হয় । এই দিনগুলিতে সহবাস করলেও গর্ভধারণের ঝুঁকি থাকে না। পিরিয়ড শুরুর প্রথম সাত দিন ও শেষের প্রথম সাত দিন সহবাস করা নিরাপদ ।
২. প্রত্যাহার পদ্ধতি: প্রত্যাহার, বা “পুল-আউট” পদ্ধতিতে বীর্যপাতের আগে যোনি থেকে লিঙ্গ অপসারণ করতে হয় । যৌন সঙ্গম কালে বীর্যপাতের পূর্বে যোনি থেকে লিঙ্গ বের করে শুক্রানু বাহিরে ফেলেও গর্ভাবস্থা প্রতিরোধ করা যায় ।
পরিশেষে যদি বলতে হয় জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কোনটি ভালো তাহলে বলতে হয় আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য জন্মবিরতিকরন পিল ও কনডম ব্যবহারের পদ্ধতিটিই সবচেয়ে ভালো । যদিও অন্যান্য উন্নত দেশে ভেসকটমি ও টিউবাল লাইগেশনকে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি বলে মনে করা হয় । প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন পদ্ধতির বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আছে সেক্ষেত্রে আপনার জন্য যেটি ভালো সেটিই কোন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত ।