প্রশিক্ষণ কি ?
যে প্রক্রিয়ায় যোগ্যতা ও দক্ষতার উন্নয়ন ঘটনো হয় তাকে প্রশিক্ষণ বলে । কর্মীর মেধা বিকাশে অধিকতর দক্ষতা অর্জনের উপায় হিসেবে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই ।
প্রশিক্ষণ কাকে বলে ?
সাধারণ অর্থে কোনোকিছু হাতেকলমে শিখানোকে প্রশিক্ষণ বলে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের নিকট হতে স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে হাতে কলমে শিক্ষা ও উদ্বুদ্ধকরণের প্রক্রিয়াকে প্রশিক্ষণ বলা হয় । বস্তুত পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে হাতেকলমে যে শিক্ষাদান করা হয় তাকে প্রশিক্ষণ বলে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীর মনোভাবও উন্নত করা হয়। যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে পৌছার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
Edwin B. Flippo-এর মতে, “Training is the act of increasing the knowledge and skill of an employee for doing a particular job.”
অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের লক্ষ্যে কর্মীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশলকে প্রশিক্ষণ বলে।
Decenzo & Robbins – এর মতে, “Training involves changing of skills, knowledge, attitude or social behaviour.”
অর্থাৎ, জ্ঞান, দক্ষতা, মনোভাব অথবা সামাজিক আচরণ পরিবর্তনের ব্যবস্থা হচ্ছে প্রশিক্ষণ।
পরিশেষে বলা যায়, নিয়োজিত কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অধিক মানসম্মত কাজ আদায়ের জন্যই প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এর মাধ্যমে কর্মীর জ্ঞান, দক্ষতা, আচরণের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। ফলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠান উভয়েই লাভবান হয়।
প্রশিক্ষণের বৈশিষ্ট্য
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে প্রশিক্ষণের ভুমিকা ব্যাপক । উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা কিছু বৈশিষ্ঠ্য খুজে বের করতে পারি । প্রশিক্ষণের বৈশিষ্ঠ্য গুলো হলো-
- প্রশিক্ষণ মানবসম্পদ উন্নয়নের একটি বিশেষ প্রক্রিয়া।
- প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীকে কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে বাস্তবসম্মত শিক্ষা প্রদান করা হয়।
- প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীর মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতার বিকাশ ঘটে ।
- কর্মীরা মানসিকভাবে উৎসাহিত হয়
- কর্মির কার্যসন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায় ।
- কর্মীকে অধিকতর দায়িত্ব গ্রহণে সক্ষম করে তোলে ।
- সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় ।
- কর্মীদের মানসিক বিকাশ বেড়ে যায় ফলে নতুন নতুন আইডিয়া তৈরিতে অবদান রাখতে পারে ।
- সর্বপরি ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা বেড়ে যায় ।
আরও পড়ুন >>> মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কাকে বলে ?
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য কি ?
নতুন কর্মীকে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্যক ধারণাদান ছাড়াও কার্যদক্ষতা অর্জন এবং পুরাতন কর্মীদের দক্ষ করে তোলা প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য । প্রশিক্ষণ শুধু কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধিই করে না বরং প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কল্যাণ সাধন ও সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে অবদানও রাখে । প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নে বর্ণিত হলো :-
১. প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পরিচিতি (Acquaintance with the organisation): প্রতিষ্ঠানে নতুন কর্মী নিয়োগের পর প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সার্বিক ধারণা দেয়া প্রশিক্ষণের অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রশিক্ষণের ফলে কর্মীগণ প্রতিষ্ঠানের আদর্শ, রীতি-নীতি, কার্যক্রম ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে এবং অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করে। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
২. কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি (Increase efficiency): প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীর কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়। নতুন নতুন কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞানদান করে কর্মীকে আধুনিকায়ন ও দক্ষ করে তোলা হয়। কার্য সম্পর্কিত বিভিন্ন জ্ঞানদান কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৩. পরিবর্তন সম্পর্কিত জ্ঞানদান (Knowledge about change): প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের পরিবর্তন এবং উৎপাদন সম্পর্কিত নতুন প্রযুক্তি ও সর্বশেষ ধ্যান-ধারণা প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান অত্যাবশ্যক। প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে কর্মীগণ যে কোন পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
৪. কর্মীকে সক্রিয়করণ (To activate the employee): পুরাতন কর্মীদের একঘেঁয়েমি কাটিয়ে উঠে কার্যক্ষেত্রে সক্রিয় করে তোলার উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে । অর্থাৎ কর্মীদের আরও সক্রিয় করে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ অনেক কাজে দেয় ।
৫. দুর্ঘটনা রোধ করে (Prevents accident): প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের উৎপাদনকার্যে বিভিন্ন প্রকার দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হয়। কারিগরি জ্ঞান বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মীগণ যে কোন প্রকার দুর্ঘটনা রোধ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। এর ফলে কর্মীদের নিরাপত্তাবোধ বৃদ্ধি পায়।
৬. অপচয় ও ক্ষয়-ক্ষতি রোধ (Prevent wastage & loss): প্রশিক্ষণের ফলে কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ফলে প্রতিষ্ঠানে অপচয় ও ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস পায়। কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির ফলে কর্মীর কাজের সময় ও আর্থিক অপচয় হ্রাস পায়। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায় ও অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব হয়।
৭. কার্যে অসন্তুষ্টি ও প্রতিষ্ঠান ত্যাগ হ্রাসকরণ (Reduce dissatisfaction & labour turnover): প্রশিক্ষণের ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে কার্যে অসন্তুষ্টি দূরীভূত হয় এবং কর্ম পরিত্যাগের হার হ্রাস পায়। কর্মীগণ কাজের প্রতি আত্মনিয়োগ করে উৎপাদন বৃদ্ধি করে।
৮. বুদ্ধিদীপ্ততার বিকাশ সাধন (Developing intelligence): কৌশলগত কর্ম সম্পাদনের জন্য কর্মীদের বুদ্ধিদীপ্ততার প্রয়োজন । কর্মী প্রশিক্ষণ কর্মীদের বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞানের বিকাশ সাধন করে। এর ফলে কৌশলগত কর্মসম্পাদনে কর্মীর বুদ্ধিবৃত্তির উৎকর্ষ সাধিত হয়।
৯. উত্তম শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা (Establish cordial labour management relationship): প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টিতে এবং ব্যবস্থাপনা ও কর্মীর মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসানে প্রশিক্ষণ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন সহজতর হয়।
১০. ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত ধারণা (Providing information regarding the management): প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নতুন কর্মীদেরকে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা দেয়া হয়। ফলে কর্মী ও ব্যবস্থাপনার দূরত্ব হ্রাস করে কর্মীদের কার্যকর নির্দেশনা প্রদান সহজ হয়। প্রশিক্ষিত কর্মীদের সাহায্যে সহজে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। সহজ সংগঠন ও কাজে সুষ্ঠু সমন্বয় অর্জন করা যায়; কর্মীদের প্রেষিত করা সহজ হয়। ফলে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১১. সম্পদের কাম্য ব্যবহার (Optimum utilization of resources): প্রশিক্ষণের দ্বারা কর্মীদের আধুনিক কর্মকৌশল সম্পর্কে জ্ঞানদান করা হয়। তদুপরি নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ও উন্নত কার্যপন্থা সম্পর্কে দক্ষতা লাভ করে প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করে।
১২. পদোন্নতির যোগ্য করে তোলা (Increasing efficiency for promotion): বয়স্ক কর্মীদের কাজে দক্ষতা বৃদ্ধি করে কাজে আগ্রহী করে তোলা প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য। এর ফলে অধিকতর দায়িত্ব অর্পণ ও ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগদান সহজ হয়।
বস্তুত প্রশিক্ষণ একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা নিশ্চিত করে। সেজন্য প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্মী প্রশিক্ষণকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন >>> মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার নীতিমালা ও বৈশিষ্ট্য !
FAQs
ট্রেনিং কি ?
উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় যোগ্যতা ও দক্ষতার উন্নয়ন ঘটনো হয় তাকে প্রশিক্ষণ বলে ।
প্রশিক্ষণ কি ?
উত্তর: প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের নিকট হতে স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে হাতে কলমে শিক্ষা ও উদ্বুদ্ধকরণের প্রক্রিয়াকে প্রশিক্ষণ বলা হয় ।
প্রশিক্ষণ বলতে কি বুঝায় ?
উত্তর: একটি নির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনের লক্ষ্যে কর্মীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির কৌশলকে প্রশিক্ষণ বলে।
প্রশিক্ষণ মডিউল কি ?
উত্তর: প্রশিক্ষণ মডিউল মুলত একটি প্রশিক্ষণ সূচি। একটি প্রশিক্ষণের মধ্যে কখন, কোথায়, কি কি ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে তার বিস্তারিত বিবরণকে প্রশিক্ষণ মডিউল বলে ।
ট্রেনিং কত প্রকার ?
উত্তর: ট্রেনিং দুই প্রকার – ১. অন-দ্যা জব ট্রেনিং ২. অফ-দ্যা জব ট্রেনিং ।