প্রশিক্ষণের গুরুত্ব কি ?
প্রশিক্ষণ একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্ভাবনার নতুন দ্বার উম্মোচিত করতে পারে । কর্মীদের মধ্যে দক্ষতা, জ্ঞান ও কাজ করার স্পৃহা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। ফলে ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জন সহজতর হয় । প্রশিক্ষণ এমন একটি গুরুত্বপুর্ন কাজ যা মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করে থাকে । তাই ব্যবসায়ের উন্নতিতে প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমাদের জানা উচিৎ ।
প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত মানবসম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সর্বোত্তম কার্যসম্পাদন করা প্রশিক্ষণের মৌলিক উদ্দেশ্য। এছাড়াও আরও কিছু প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আছে নিচে তা আলোচনা করা হলো:
১. দক্ষতা বৃদ্ধি (Increase efficiency): প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীর কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়। নতুন নতুন কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে জানদান করে কর্মীকে আধুনিকায়ন ও দক্ষ করে তোলা হয়। কার্য সম্পর্কিত বিভিন্ন জ্ঞানদান কর্মীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
২. কার্যকরী নির্দেশনা প্রদান (Effective directing): প্রতিষ্ঠানে নবনিযুক্ত কর্মীদের প্রশিক্ষণের ফলে তারা রীতিনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে। প্রশিক্ষণের ফলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সান্নিধ্যে আসতে পারে এবং নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে পারে।
৩. দুর্ঘটনা হ্রাস (Reduce accident): নতুন কলাকৌশল ও যন্ত্রপাতির সাথে পরিচয় ও এসব যন্ত্রের সফল ব্যবহার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনার পরিমাণ হ্রাস পায়।
৪. অপচয় হ্রাস (Reduction of wastages): প্রতিষ্ঠানের অপচয় হ্রাস করা প্রশিক্ষণ কর্মসূচির অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রশিক্ষণ কর্মীকে দায়িত্ব সচেতনতা ও কর্মনিপুণতা শিক্ষা দেয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের অপচয় হ্রাস পায়।
৫. নৈপুণ্যতা বৃদ্ধি (Increase of dexterity): কোনো কার্যসম্পাদনে কর্মী তার কার্যপরিচালনায় কতটুকু সক্ষম বা নিপুণ তাকে নৈপুণ্যতা বলে। একমাত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মিগণ এ নৈপুণ্যতা অর্জন করতে পারে।
আরও পড়ুন >>> প্রশিক্ষণ কি বা প্রশিক্ষণ কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ঠ্য ও উদ্দেশ্য !
৬ . উৎপাদন বৃদ্ধি (Increase of production): প্রশিক্ষণের ফলে কর্ষিগণের দক্ষতা ও নৈপুণ্যতা বৃদ্ধি পায় এবং নতুন হয়। কলাকৌশল সম্পর্কে জানতে পারে। ফলে কম খরচে অধিক পরিমাণ উৎপাদন করা সম্ভব ।
৭. উৎসাহ বৃদ্ধি (Increasing inspiration): প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মীর কাজের মনোবল বৃদ্ধি পায়। এতে কর্মী উৎসাহ সহকারে কাজ করতে পারে।
৮. মিতব্যয়িতা অর্জন (Achieving economy): প্রশিক্ষণ দ্বারা দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সম্পদের সুসম ব্যবহার করে অপচয় রোধ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে মিতব্যয়িতা অর্জনে সহায়তা করে। কর্মীর ব্যাপক দক্ষতা অর্জিত হওয়ায় ব্যয় হ্রাস পায় এবং মিতব্যয়িতা অর্জিত হয়।
৯. সহজ পরিচালনা (Easy administration): প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কর্মীদের পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানের সহজ। কর্মীদের বেশি তত্ত্বাবধান দিকনির্দেশনা দিতে হয় না বলে দক্ষভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পাদন করা যায়।
১০. কার্যের সাথে পরিচয়করণ (Make acquaintance with work): প্রশিক্ষণের ফলে একজন নবনিযুক্ত কর্মী নিজ কাজ বা কর্মপদ্ধতির সাথে পরিচিতি লাভ করতে পারে। এর ফলে সে কার্য সম্পাদনের কলাকৌশল সম্পর্কিত বিষয়াদি জানতে পারে। এছাড়া আধুনিক প্রতিষ্ঠানে কাজের ধরন ও পদ্ধতিতে অনেক সময় পরিবর্তন আনয়ন করতে হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এরূপ পরিবর্তনের সাথে একজন কর্মী বা নির্বাহী নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
১১. পরোক্ষ ব্যয় হ্রাস (Reductio of indirect expenses): কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কার্যক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা বাড়ে। আর জনশক্তির মান বৃদ্ধির কারণে উপায়-উপকরণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। এতে সময় ও কাঁচামালের সাশ্রয় হয়। কিন্তু প্রশিক্ষণ প্রদান না করলে বা কর্মীবাহিনী প্রশিক্ষিত না হলে অনভিজ্ঞতার কারণে প্রতিষ্ঠানে নানান ধরনের অপচয় ও ব্যয় বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন >>> প্রশিক্ষণের পদ্ধতি বা প্রকারভেদ গুলো কি কি ?
১২. নবতর চিন্তা-চেতনার উন্নয়ন (Development of new thinking): প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মীদেরকে সর্বশেষ তত্ত্ব ও তথ্য জানানো যায়। প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে তারা প্রতিষ্ঠানের সুবিধা-অসুবিধা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানার ও মতবিনিময়ের সুযোগ লাভ করে। এতে তাদের চিন্তা-চেতনায় উৎকর্ষতা আসে।
১৩. শ্রম ঘূর্ণায়মানতা ও শ্রম অসন্তোষ হ্রাস (Reduction of labour turnover and unrest): প্রতিষ্ঠানের কর্মিগণের প্রশিক্ষণের ফলে নবতর কলাকৌশল ও প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে সুযোগ পায়। এতে তাদের কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা প্রতিষ্ঠানের সাথে আরও বেশি একাত্মতা পোষণ করতে পারে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে ভবিষ্যতে কী কী সুযোগ- সুবিধা পাওয়া যাবে এ সম্পর্কেও সম্যক ধারণা লাভ করতে পারে। যে কারণে শ্রম ঘূর্ণায়মানতা ও শ্রম অসন্তোষ হ্রাস পায়।
১৪: সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার (Proper utilization of resources): উৎপাদনের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন উপকরণের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন সহজতর করতে প্রশিক্ষণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কাজ এবং কার্যপ্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিকভাবে জ্ঞানার্জনের মধ্যমে সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে।
১৫. প্রতিযোগিতা মোকাবিলা (Facing competition): আধুনিক যুগ প্রযুক্তির যুগ। কাজেই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে যথাযথ ধারণা থাকতে হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির জটিল বিষয়, আধুনিক ব্যবস্থাপকীয় কলা-কৌশল ও যন্ত্রপাতি সম্পর্কে কর্মীদের পূর্ণাঙ্গ ধারণা দিয়ে প্রযুক্তির সুবিধা লাভ করা যায়।
অতএব পরিশেষে আমরা বলতে পারি প্রশিক্ষণ একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে ব্যপক ভুমিকা পালন করে । তাই প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম যা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে ভুমিকা পালন করে ।