নেতৃত্ব কি ?
ইংরেজি ‘Lead’ শব্দটি ‘Leadership’ শব্দ থেকে এসেছে। যার বাংলা অর্থ হচ্ছে নেতৃত্ব । নেতৃত্ব শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো পথ প্রদর্শন করা বা পরিচালনা করা। প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনে কাউকে না কাউকে পথ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জন করতে হয় । যিনি এ পথ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জনে সচেষ্ট হন তাকে নেতা বলে । একজন নেতা তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে কর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাজ আদায় করে নেন।
নেতৃত্ব কাকে বলে ?
নেতৃত্ব হলো অধীনস্থ কর্মীদের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের কৌশল ।
বর্তমান কর্মী সচেতনতার যুগে দক্ষ নেতৃত্বের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তিনি তার কার্যাদি দ্বারা সকলকে প্রভাবিত করেন। আর এ কারণে নেতৃত্বকে কলা (Art) বলা হয়। নেতা তার সচেতনতা, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার দ্বারা সব কর্মীকে তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে কার্যসম্পাদনে সচেষ্ট রাখে।
অর্থাৎ অধস্তনদের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার প্রক্রিয়াই হলো নেতৃত্ব। যিনি এই নেতৃত্বদান কাজের সাথে জড়িত তাকে নেতা বলা হয়। নেতা তার গুণের দ্বারা অনুগামীদের লক্ষ্যে পরিচালিত করতে শৃঙ্খলা ও সংহতি বজায় রাখতে এবং মনোবল রক্ষা করতে অবদান রাখেন।
নিচে কয়েকজন প্রখ্যাত মনীষীর সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো:
অধ্যাপক Koontz & O’ Donnel-এর মতে, “Leadership is the art or process of influencing people so that they will strive willingly and enthusiastically toward the achievement of group goals.”
অর্থাৎ, নেতৃত্ব হচ্ছে কর্মীদেরকে প্রভাবিত করার পদ্ধতি ও কৌশল যাতে তারা ঐচ্ছিকভাবে দলীয় লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হয়।
অধ্যাপক Bartol & Martin-এর মতে, “Leadership is the process of influencing others to achieve organizational goals.”
অর্থাৎ, সাংগঠনিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যদেরকে প্রভাবিত করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় নেতৃত্ব।
নেতৃত্বের উদাহরণ
জনাব সাজ্জাদ আলম একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন উপায় উপকরণ সংগ্রহ করেন এবং প্রয়োজনে বিভিন্ন বিভাগে কর্মী নিয়োগ দেন। নিয়োগকৃত কর্মীদের দ্বারা কাজ বাস্তবায়নের জন্য তিনি কর্মীদের কাজে নির্দেশনা প্রদান করেন। এছাড়াও তিনি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের অতিরিক্ত কাজের জন্য পারিশ্রমিক প্রদান করবেন বলে ঘোষণা দেন। প্রয়োজনে তিনি কর্মীদের কাজের তদারকি করেন এবং তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করেন । এতে কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কার্যসম্পাদন করেন। জনাব সাজ্জাদ আলমের এ সকল কাজ নেতৃত্বের বহিঃপ্রকাশ ।
আরও পড়ুন >>> প্রশিক্ষণ কি বা প্রশিক্ষণ কাকে বলে ? এর বৈশিষ্ঠ্য ও উদ্দেশ্য !
নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য
সংজ্ঞা থেকে আমরা কিছু নেতৃত্বের বৈশিষ্ঠ্য খুজে পাই । নিচে নেতৃত্বের বৈশিষ্ঠ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –
১. কর্মী পরিচালনার কৌশল: নেতৃত্ব হলো কর্মী পরিচালনার গুণ বা এক ধরণের কৌশল । নেতা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তার কর্মীদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেয় । মানুষের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে বিভিন্ন ধরণের কৌশল অবলম্বন করতে হয় আর এই কাজটি করে নেতা ।
২. কর্মীদের উৎসাহিতকরণ: কর্মীদের উতসাহিত করে তাদের কাছ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ আদায় করে নেওয়াও নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ন বৈশিষ্ঠ্য ।
৩. লক্ষ্য অর্জন: প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোন পথে কীভাবে চলতে হবে তা ঠিক করে দেয় নেতৃত্ব । সর্বপরি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য যা করা দরকার তা করে নেতৃত্ব ।
৪. সঠিক দিকনির্দেশনা: অধস্তনদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা না দিলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন বাধাগ্রস্থ হয় । আর এই দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে নেতৃত্ব ।
৫. কর্মী সংগ্রহ ও নিয়োগ: প্রতিষ্ঠানের কোন বিভাগে কি ধরণের কর্মী প্রয়োজন তা জানা এবং দক্ষ কর্মী নিয়োগ দেওয়া ও তাদেরকে ধরে রাখার গুরুত্বপুর্ন দ্বায়িত্ব পালন করে নেতৃত্ব ।
আরও পড়ুন >>> প্রশিক্ষণের পদ্ধতি বা প্রকারভেদ গুলো কি কি ?
নেতৃত্বের গুরুত্ব
নেতৃত্ব হলো কোনো দল বা গোষ্ঠীকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়ার কৌশল। নেতৃত্ব ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে চলতে পারে না। মূলত নেতৃত্ব হচ্ছে নেতার কতিপয় কর্মের সমষ্টি। তাই নেতাকে ভিত্তি করেই কর্মীরা উদ্দেশ্য অর্জনে এগিয়ে যায়। প্রতিষ্ঠান তথা ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্বের গুরুত্ব :
১. কার্যকর নেতৃত্ব : কার্যকর নেতৃত্ব কর্মীদের প্রেষণাদানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে একজন আদর্শ নেতা কর্মীদেরকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিয়ে কিংবা আর্থিক সুবিধাদি প্রদান করে কাজে অধিক মনোযোগী করতে পারে। এতে কাজের মান ও কর্মদক্ষতা উভয়ই বৃদ্ধি পায়।
২. সহযোগিতা (Co-operation): দলীয় গতিশীলতা সহযোগিতার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। নেতৃত্ব কর্মীদের মনে সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করে। কর্মীদের আস্থা ও সহযোগিতার মাধ্যমে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানের কার্যসম্পাদন অধিকতর কার্যকর ও ফলপ্রদ করে তোলে।
৩. দক্ষতা বৃদ্ধি (Increasing efficiency): দক্ষ কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সঠিক নির্দেশনা কর্মীদেরকে অধিক মনোযোগী ও আগ্রহী করে তোলে। ফলে কর্মীদের কার্যদক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
৪. সংঘবদ্ধতা সৃষ্টি (Creating team spirit): ব্যবস্থাপনার অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত জনশক্তিকে সংঘবদ্ধ করে পরিচালনা করা। কারণ সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা ছাড়া কখনো প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয় না। প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব ভালো থাকলে অধীনস্থ কর্মীবাহিনী সংঘবদ্ধভাবে আবর্তিত হয়। তাই নেতৃত্ব যত শক্তিশালী হয় সংগঠনও তত শক্তিশালী হয়ে থাকে।
৫. সুষ্ঠু সমন্বয় (Proper coordination): কর্মীদের প্রকৃতি, যোগ্যতা-অযোগ্যতা, চাহিদা ইত্যাদি সম্পর্কে অবগত থাকেন বলে কীভাবে কাকে কোন দায়িত্ব কতটুকু প্রদান করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে তা নেতা সঠিকভাবে নির্বাচন করতে পারেন। তাই সঠিক নেতৃত্বদানের ফলে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্ষেত্রে সুষ্ঠু সমন্বয় নিশ্চিত হয়।
৬. মনোবল উন্নয়ন (Developing morale): নেতা আদেশ-নির্দেশ, উৎসাহ-উদ্দীপনা, সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদানের মাধ্যমে কর্মীদের ভেতরে স্বেচ্ছায় কার্যসম্পাদনের ইচ্ছা জাগ্রত করে। নির্বাহীদের সাহায্য-সহযোগিতায় কর্মীদের কাজের ফলপ্রদতা বৃদ্ধি পায় এবং তাদের মনোবলেরও উন্নয়ন ঘটে।
৭. নমনীয়তা বৃদ্ধি (Increasing flexibility): পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে সংগতি বিধান করে ব্যবসায়কে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থাপনাকে অনেক সময় গৃহীত পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হয়। কার্যকর নেতৃত্ব সেক্ষেত্রে কর্মীদের মনোভাবে সহজে পরিবর্তন আনে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক নমনীয়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
৮. সামাজিক দায়িত্ব (Social responsibility): অনেক প্রতিষ্ঠানকে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। সেক্ষেত্রে একজন আদর্শ নেতাকে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের সমস্যা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এতে করে কর্মীদের কার্যসন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়।
নেতৃত্ব কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া। এটা প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরে, সকল কাজে তথা ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ।
FAQs
১. নেতৃত্ব কোন ধরনের গুন ?
= সামাজিক গুণ ।
২. লিডার কাকে বলে ?
= লিডার এর বাংলা হলো নেতা । অধস্তনদের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে যিনি পরিচালনা করেন তাকে লিডার বলে ।
৩. লিডারশীপ কাকে বলে ?
= ইংরেজি ‘Lead’ শব্দটি ‘Leadership’ শব্দ থেকে এসেছে। যার বাংলা অর্থ হচ্ছে নেতৃত্ব। নেতৃত্ব হলো অধীনস্থ কর্মীদের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের কৌশলবিশেষ।
৪. লিডারশীপ কি ?
= অধস্তনদের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার প্রক্রিয়াই হলো লিডারশীপ ।
৫. নেতার সংজ্ঞা
= প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনে যিনি পথ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জনে কাজ করেন তাকে নেতা বলে ।
৬. নেতৃত্ব কী ?
= সাংগঠনিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যদেরকে প্রভাবিত করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় নেতৃত্ব।
৭. নেতৃত্ব কি ধরনের গুন ?
= সামাজিক গুণ ।
৮. নেতৃত্ব বলতে কি বুঝায় ?
= নেতৃত্ব হচ্ছে কর্মীদেরকে প্রভাবিত করার পদ্ধতি ও কৌশল যাতে তারা ঐচ্ছিকভাবে দলীয় লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে ।
৯. নেতা কাকে বলে ?
= প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনে কাউকে না কাউকে পথ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জন করতে হয় । যিনি এ পথ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জনে সচেষ্ট হন তাকে নেতা বলে ।
2 Comments
excellent
thank you very much