নির্দেশনা কাকে বলে ? একটি উত্তম নির্দেশনার বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি আলোচনা কর ।
অনেকেই গুগইলে সার্চ করেন নির্দেশনা কাকে বলে ? নির্দেশনা কি ? এবং একটি উত্তম নির্দেশনার বৈশিষ্ট্য । তাই আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় নির্দেশনা কাকে বলে ? ও একটি উত্তম নির্দেশনার বৈশিষ্ট্য বা গুনাবলী । চলুন প্রথমে জেনে নেওয়া যাক ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয় নির্দেশনা কি / – নির্দেশনা কাকে বলে ?
নির্দেশনা কাকে বলে ?
প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য অধস্তনদের আদেশ-নির্দেশ প্রদানকে নির্দেশনা বলে। ইংরেজি Directing শব্দটির প্রতিশব্দ হচ্ছে নির্দেশনা। নির্দেশনার মাধ্যমেই ব্যবস্থাপনার বাস্তব কাজ শুরু হয়। নির্দেশনা বলতে কোনো বিষয়ের প্রতি নির্দেশ প্রদান করাকে বোঝায়।
ব্যাপক অর্থে নির্দেশনা বলতে শুধু কার্যসম্পাদনের নির্দেশ দানকেই বোঝায় না; বরং কর্মীরা কীভাবে কাজ করবে, কখন করবে তার জন্য আদেশ, উপদেশ, পরামর্শদান, তত্ত্বাবধান ও অনুসরণ কাজকে নির্দেশনা বলে। নির্দেশনা কখনও উর্ধ্বগামী না হয়ে নিম্নগামী হয় এবং ব্যবস্থাপনার সকল কাজের সাথে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
Marshall E. Dimock নির্দেশনাকে ‘প্রশাসনের হৃৎপিণ্ড‘ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
নির্দেশনার কতিপয় সংজ্ঞা নিচে উল্লেখ করা হলো:
Marshall E Dimock-এর মতে, নির্দেশনা কার্য হচ্ছে প্রশাসনের হৎপিণ্ড বা প্রাণস্বরূপ যা কর্তব্য নির্ধারণ করে, আদেশ ও নির্দেশ প্রদান করে এবং গতিশীল নেতৃত্বের ব্যবস্থা করে।
Prof. W.H Newman-এর মতে, যে পন্থায় একজন নির্বাহী তার অধীনস্থ কর্মীদের আদেশ ও উপদেশ প্রদান করেন বা কর্মপন্থার ইঙ্গিত করেন তাকে নির্দেশনা বলে।
A Skinner-এর মতে, নির্দেশনা হচ্ছে ব্যবস্থাপনায় কর্মোদ্যোগমূলক কাজ। যা সাধারণ নির্দেশ, কার্য বণ্টন এবং উপদেশ প্রদান করে থাকে।
আশা করছি নির্দেশনা কাকে বলে এই সম্পর্কে আপনাদের খুব ভালো একটি ধারণা হয়েছে ।
আরও পড়ুন >>> নেতৃত্ব কি বা কাকে বলে ? নেতৃত্বের বৈশিষ্ঠ্য ও নেতৃত্বের গুরুত্ব !
একটি উত্তম নির্দেশনার বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি আলোচনা কর ।
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের কর্মপ্রচেষ্টাকে লক্ষ্যাভিমুখ করা এবং তাদের নিয়ে প্রত্যাশিত কাজ করিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপকীয় একটি কার্য হলো নির্দেশনা। ব্যবস্থাপনায় নির্দেশনার গুরুত্ব অপরিসীম। উত্তম নির্দেশনা ব্যতীত প্রতিষ্ঠান তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছতে পারে না। নিচে উত্তম নির্দেশনার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো:
১. সুস্পষ্টতা (Clear cut): যে বক্তব্য সুস্পষ্ট তার সফলতাও বেশি। কারণ অস্পষ্ট নির্দেশনা দ্বারা সঠিকভাবে কার্য সম্পাদন করা যায় না। নির্দেশনা এমনভাবে হওয়া উচিত যেন সবাই ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারে। তাই প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা সুস্পষ্ট এবং সবার নিকট গ্রহণযোগ্য হওয়া আবশ্যক।
২. সংক্ষিপ্ততা (Brevity): নির্দেশনা সবসময় সংক্ষিপ্ত তবে পূর্ণাঙ্গ হওয়া আবশ্যক। কারণ সংক্ষিপ্ত নির্দেশনার সবার নিকট সাদঢ়ে গ্রহণীয়। তাছাড়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্য সময় ও শ্রম লাঘব করে। সেক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য যেন ব্যাহত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩. যোগসূত্র স্থাপন (Provides a links): পরিকল্পনা, সংগঠন ও কর্মী সংগঠন হলো ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি পর্বের কাজ। পক্ষান্তরে, নিয়ন্ত্রণ হলো পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিতকরণ। নির্দেশনা ব্যবস্থাপনার এসব কাজের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন ও সংশ্লিষ্ট লোকজনকে কাজে প্রবৃত্ত করে থাকে।
৪. উর্ধ্বতনের কাজ (Superior’s work): নির্দেশনা ব্যবস্থাপকীয় কাজ বিধায় এটি সকল সময় এবং সর্বক্ষেত্রেই উর্ধ্বতনের কাজ। তাই প্রকৃতিগতভাবে এটি উচ্চস্তর হতে নিম্নস্তরে নেমে আসে। এর গতিপথ কখনো উর্ধ্বগামী বা সমান্তরাল হয় না।
৫. সময়ানুবর্তিতা (Timeliness): একটি উত্তম নির্দেশনা অবশ্যই সময়ানুবর্তী হওয়া উচিত। কেননা প্রবাদ আছে, “সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের হাজার ফোঁড়”। তাই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের সঠিক সময়ে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করা উচিত। কারণ সঠিক সময়ে কর্মীদের নির্দেশনা না দিয়ে অসময়ের নির্দেশনার দ্বারা প্রতিষ্ঠান তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছতে পারে না।
৬. যৌক্তিকতা (Logicality): নির্দেশনা উত্তম হতে হলে তা অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত হওয়া আবশ্যক। অধস্তন কর্মীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, যোগ্যতা, সামর্থ্য, কর্মপরিবেশ, সময় ইত্যাদি যথাযথ বিবেচনা করে নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। অযৌক্তিক নির্দেশনা কর্মীদের মনের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি বয়ে আনে।
৭. লিখিত (Helping controlling): একটি উত্তম নির্দেশনা সবসময়ই লিখিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। নির্দেশনা লিখিত হলে কর্মীদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা অনুধাবনে অসুবিধা হয় না। এছাড়া লিখিত নির্দেশনার মাধ্যমে নির্বাহীর অনুপস্থিতিতে কর্মীদের কাজ করতে সুবিধা হয়। কারণ লিখিত নির্দেশনা মোতাবেক কর্মীরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, একটি গতিশীল, শক্তিশালী, কার্যকর ও ফলপ্রদ নির্দেশনার উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহ থাকা অপরিহার্য। তাই উত্তম নির্দেশনার এসব বৈশিষ্ট্য অর্জনে সচেষ্ট হওয়া উচিত।