কালোজিরা
কালোজিরা (Black Cumin) এশিয়া এবং ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের একটি ফুলের উদ্ভিদ। এর বীজ হাজার হাজার বছর ধরে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে । কালোজিরার তেল হল একটি ভেষজ উপাদান যা Nigella sativa উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত, যা পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার একটি উদ্ভিদ। এর শক্তিশালী ঔষধি গুণ রয়েছে । এর মধ্যে শক্তিশালী এন্টিওক্সিডেন্ট থাকার কারণে কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি ।
কালোজিরার উপকারিতা
কালো জিরা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে, গর্ভাবস্থায় ব্যাথা কমাতে, ফোলা কমাতে পারে এবং অ্যান্টিহিস্টামিন হিসাবে কাজ করে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া কমাতে বিশেষভাবে উপযোগী ।
মানুষ সাধারণত হাঁপানি, জ্বর, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, একজিমা, ওজন হ্রাস, মাসিকের সমস্যা, যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আরও অন্যান্য অনেক সমস্যার জন্য কালোজিরা ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তবে এইগুলির অনেকগুলির ব্যবহারকেই সমর্থন করার জন্য কোনও ভাল বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বা গবেষণা তেমন নেই।
কালোজিরার তেলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ। এটি ত্বক এবং চুলের উপকার করতে পারে, ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও
- মাথাব্যথা
- পিঠে ব্যাথা
- উচ্চ্ রক্তচাপ
- সংক্রমণ
- ব্যাথা প্রভৃতি কমাতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
এই ব্লগে কালোজিরার উপকারিতা প্রমাণ-ভিত্তিক ১১টি উপকারের কথা আলোচনা করা হবে । আশাকরছি পোস্টটি পরলে আপনাদের অনেক উপকার হবে:
১. ব্রণ কমাতে কালোজিরা
কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, কালোজিরার তেল ত্বকের জন্য খুবই উপকারী । কালোজিরার তেল ত্বক মসৃণ রাখতে ও ব্রণ, কালো দাগ, রোদে পোড়া দাগ দূর করতে পারে । কালোজিরার উপকারিতা তেলের সাথে যুক্ত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যের কারণে পাওয়া যায় ।ব্রণ সহ ত্বকের এলাকায় কালোজিরার তেল দিয়ে তৈরি লোশন নিয়মিত ২ মাস ব্যবহার করলে ব্রণের ক্ষত উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে ।
২. ক্ষত নিরামইয়ে কালোজিরার তেল
কালোজিরার তেলে থাইমোকুইনোন নামক একটি যৌগ রয়েছে, যা টিস্যু বৃদ্ধি করতে পারে। যার ফলে ক্ষত খুব তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায় । কালোজিরার তেল ও মধু মিশিয়ে ক্ষত স্থানে লাগালে ক্ষত স্থান খুব দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং ব্যাথানাশক হিসেবেও কাজ করে থাকে।
৩. চুল স্বাস্থ্য ভালো করার জন্য কালোজিরার তেল
কালোজিরার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য এই তেল প্রায়ই চুলের যত্নের জন্য তৈরিকৃত পণ্যগুলিতে যুক্ত করা হয়, যেমন চুলের মাস্ক এবং শ্যাম্পু । কালোজিরার তেলের সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে প্রতিদিন ব্যবহার করলে চুল পড়া উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় ।
৪. পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কালোজিরা
যেসকল পুরুষের শুক্রানু অনেক কম বাচ্চা হতে বাধার সৃষ্টি করে তাদের জন্য কালোজিরার তেল খুবই উপকারী । কালোজিরার তেল খেলে শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়ে এবং শুক্রাণু দ্রুত নড়াচড়া করতে পারে। এটি গর্ভাধারণের হার উন্নত করে । তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ।
৫. স্তনে ব্যথা (মাস্টালজিয়া) কমাতে কালোজিরা
মাসিক চক্রের সময় যাদের স্তনে ব্যাথা হয় তখন স্তনে কালো বীজের তেল যুক্ত জেল লাগালে ব্যথা কমে যায়।
আরও পড়ুন >>> মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
৬. হাঁপানি কমাতে কালোজিরা
হাঁপানির ওষুধের সাথে অল্প পরিমাণে কালোজিরা গ্রহণ করলে হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যাক্তির কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। তবে এটি খুব কম ফুসফুসের কার্যকারিতা রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই কাজ করে বলে মনে করা হয়।
৭. কালোজিরা শরীরের ব্যাথা কমায়
কালোজিরার তেলে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগ আছে । কালোজিরার তেল নিয়মিত খেলে ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে ।
৮. ওজন কমাতে সাহায্য করে
যদিও এই বিষয়টি অস্পষ্ট যে, কালোজিরা তেল ওজন হ্রাস এবং শরীরের চর্বি কমাতে পারে । এক গবেষণায় কালোজিরার তেল খাবার সাথে সাথে নিয়মিত ডায়েট করে কিছু মানুষের স্থুলতা অনেকাংশে কমে গিয়েছিল। তাই মনে করা হয় কালোজিরা ওজন কমাতে কাজ করে। কিন্তু এই বিষয়ে আরও গবেষণার দরকার আছে ।
আরও পড়ুন >>> ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়
৯. রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে
গবেষণা দেখায় যে কালোজিরার তেলের আরও একটি উপকারিতা হলো, রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রিত রাখা । কালোজিরা রক্তে শর্করা কমাতে এবং হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা হ্রাস করতে কার্যকর ছিল, যা দীর্ঘমেয়াদী রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণের একটি পরিমাপক ।
১০. একজিমার উপসর্গ কমাতে পারে
কালোজিরার তেল একজিমার উপসর্গগুলিকে কমাতে পারে । ত্বক শুষ্ক থাকা, চুলকানি ও অমসৃণ থাকা থেকে রক্ষা করে।
১১. কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে
গবেষণায় দেখা গেছে যে কালোজিরার তেল বিপাকে সাহায্য করে ফলে কোষ্টকাঠিন্য দূর হয়। মনে রাখতে হবে সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বিপাকে সাহায্য করে ।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরার উপকারিতা পেতে হলে এটি নিয়মিত খেতে হবে এবং খাওয়ারও কিছু নিয়ম আছে যেমন-
- প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে পানির সাথে অথবা মধুর সাথে মিশিয়ে ১-২.৫০ গ্রাম কালোজিরা খাবেন শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
- চা বা গরম ভাতের সাথে মিশিয়েও খাওয়া যায় ।
- এছাড়া যেকোন তরকারি রান্নায় কালোজিরা ব্যবহার করা যায়।
- কালোজিরার ভর্তাও অনেক সুস্বাদু।
- এছাড়া পিঠা বা বিভিন্ন মুখরোচক খাবারে কালোজিরা ব্যবহার করলে এর পুষ্টিগুন অনেক বেড়ে যায়।
বিশেষ সতর্কতা
কালোজিরার উপকারিতা অনেক আছে কিন্তু কিছু সতর্কতাও মনে রাখতে হবে যেমন-
- কালোজিরা সাধারণত খাবারের সাথে খাওয়া হয়, এক্ষেত্রে কালোজিরা কিছু মানুষের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে আবার এটি পেট খারাপ ও বমি ভাবও হতে পারে।
- কালোজিরার তেল বা জেল গায়ে মাখলে কিছু মানুষের জন্য অ্যালার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে, ফুসকুড়ি হতে পারে।
- কালোজিরা রক্ত জমাট বাঁধা বাধাগ্রস্থ করতে পারে এবং এতে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।