অলিভ অয়েল : অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি ও অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম
অলিভ অয়েল :
অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল জলপাই থেকে আসে । জলপাই ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী ফসল।
রান্না, প্রসাধনী, ওষুধ, সাবান এবং ঐতিহ্যবাহী বাতির জ্বালানী হিসাবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অলিভ অয়েল মূলত ভূমধ্যসাগর এলাকা থেকে এসেছে, কিন্তু আজ এটি বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়।
অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা কি ও অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম
অলিভ অয়েল বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধা দিতে পারে কারণ এতে স্বাস্থ্যকর মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এটিতে প্রদাহ উপশমকারী বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। তাই এর স্বাস্থ্যগুন অনেক।
১. অলিভ অয়েল স্বাস্থ্যকর মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ
অলিভ অয়েল হল জলপাই থেকে নিষ্কাশিত প্রাকৃতিক তেল যা জলপাই গাছের ফল থেকে তৈরি হয়। এই তেলে প্রায় 14% স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেখানে 11% পলি-আনস্যাচুরেটেড, যেমন ওমেগা -6 এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড আছে । কিন্তু অলিভ অয়েলের প্রধান ফ্যাটি অ্যাসিড হল একটি মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা অলিক অ্যাসিড নামে পরিচিত, যা মোট তেলের 73% । গবেষণা দেখা যায় যে, অলিক অ্যাসিড প্রদাহ কমায় এবং এমনকি ক্যান্সারের সাথে যুক্ত কোষের উপর উপকারী প্রভাব ফেলতে পারে ।
২. অলিভ অয়েল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল পুষ্টিকর। এর উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়াও এতে পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন ই এবং কে রয়েছে। অলিভ অয়েল শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি জৈবিকভাবে সক্রিয় এবং আপনার দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
এগুলি প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং আপনার রক্তের কোলেস্টেরলকে কন্ট্রোল করে আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে ।
৩. অলিভ অয়েল শক্তিশালী প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ ক্যান্সার, হৃদরোগ, বিপাকীয় সিনড্রোম, টাইপ 2 ডায়াবেটিস, আলঝেইমারস, আর্থ্রাইটিস এবং এমনকি স্থূলতার মতো রোগের প্রধান চালক বলে মনে করা হয়। অলিভ অয়েল প্রদাহ কমাতে পারে ।
আরও পড়ুন >>> কালোজিরার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
৪. রান্নার কাজে অলিভ অয়েলের ব্যবহার
মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট উচ্চ তাপের জন্যও বেশ উপযোগী তাই রান্নার জন্য একটি স্বাস্থ্যকর তেল হিসেবে অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল ব্যবহার করা যায় । যা খাবারের পুষ্টিগুণ বহুগুণে বাড়িয়ে দেয় ।
৫. অলিভ অয়েল স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে
স্ট্রোক আপনার মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহের বাধার, রক্ত জমাট বাঁধার কারণে বা রক্তপাতের কারণে হয় । বেশ কিছু বড় গবেষণা প্রমাণ পাওয়া গেছে যে যারা অলিভ অয়েল খান তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কম ।
৬. অলিভ অয়েল হৃদরোগের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক
হৃদরোগ বিশ্বের মৃত্যুর সবচেয়ে সাধারণ একটি কারণ । কয়েক দশক আগে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলিতে হৃদরোগ কম সাধারণত। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল হৃদরোগের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে ।
৭. চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে কিছু নিয়ম মানতে হয়।
- চুলে অলিভ অয়েল ব্যবহারের আগে চুল পরিস্কার করে নিতে হবে ।
- তারপর ভালোভাবে শুকিয়ে অলিভ অয়েল ভালোভাবে চুলে লাগাতে হবে।
- তারপর ১-১.৩০ ঘন্টা পর চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে ।
৮. এটা পাকস্থলীর জন্য উপকারী:
খাবারে জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করলে শরীরের কোলেস্টরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয় । অলিভ অয়েল তেলের আরেকটা উপকারি বিষয় হলো, এটা পাকস্থলীর জন্য ভালো।
আরও পড়ুন >>> ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়
৯. শরীরের ক্ষতিকর এসিড কমায়:
অলিভ অয়েল দিতে তৈরিকৃত খাবার খেলে যকৃৎ পরিষ্কার থাকে । অলিভ অয়েল যকৃৎ পরিষ্কার রাখতে সহযোগীতা করে ।
১০. কোষ্টকাঠিন্য দূর করে:
কোষ্টকাঠিন্য রোগীদের জন্য দিনে ১ চামচ (1 spoon) জলপাই তেল কোষ্টকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
১১. অলিভ অয়েল মুখে লাগানোর উপকারিতা
অলিভ অয়েল মুখে বা গায়ে মাখলে বয়স বাড়ার সাথে ত্বক কুঁচকানো কমে যায় । আবার সন্তান হওয়ার পর মহিলাদের পেটে সাদা রঙের দাগ কমাতে জলপাই তেল ব্যবহার করা হয় যা একটা পরীক্ষিত ব্যাপার।
এছাড়াও অলিভ অয়েল মানুষের অনেক উপকারে আসে যেমন-
- অলিভ অয়েল আলঝেইমার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে ।
- অলিভ অয়েল দিয়ে তৈরি খাদ্য টাইপ-2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে ।
- অলিভ অয়েলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে রয়েছে এক ধরণের অ্যান্টি-ক্যান্সার বৈশিষ্ট্য যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে ।
- অলিভ অয়েল জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
পরিশেষে বলা যায় অলিভ অয়েল তেল আমাদের জন্য অনেক উপকারী । বিভিন্ন ভাবে আমরা এই অলিভ অয়েল তেল কাজে লাগাতে পারি । অলিভ অয়েল তেলের উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কিত এই বিষয় আমি বিস্তারিত আলোচনা করতে চেষ্টা করেছি । আশা করছি আপনাদের এই পোস্টটি ভালো লেগেছে । উপরোক্ত উপায়ে অলিভ অয়েল ব্যবহার করে আপনার জীবনকে গড়ে তুলুন আরও সুন্দর আরও প্রাণময় । আপনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি । ধন্যবাদ