সমন্বয় জাবেদা / দাখিলা কী ?
বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ : উদাহরণসহ
সমন্বয় জাবেদা হিসাববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ টপিক । আজকে আলোচনা করবো সমন্বয় জাবেদা দাখিলা কি?, কেন দেওয়া হয়? সমন্বয় জাবেদা দাখিলা কত প্রকার এবং সমন্বয় জাবেদা দাখিলার নিয়ম। # সমন্বয় জাবেদা pdf ও সমন্বয় জাবেদার উদাহরণ এই পোস্টে পাবেন।
সমন্বয় দাখিলা কী ? / সমন্বয় জাবেদা কী ?
সমন্বয় দাখিলা কী / জাবেদা কি, সমন্বয় জাবেদা দাখিলা কাকে বলে?
একটি হিসাবকালের সকল লেনদেন সংশ্লিষ্ট হিসাব বছরে শেষ না হয়ে একাধিক বছরে ব্যাপ্ত হতে পারে। চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণী প্রণয়ন এর সময় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী হিসাবকালের যাবতীয় আয়-ব্যয়কে বাদ দিতে হয় এবং সংশ্লিষ্ট হিসাবকালের যাবতীয় আয়-ব্যয়কে হিসাবভুক্ত করে হিসাব সালের প্রকৃত আর্থিক ফলাফল অর্থাৎ নিট আয় বা নিট ক্ষতি নিরূপণ করা হয়। আর এরূপ নিট আয় বা নিট ক্ষতি নিরুপণের জন্য অসমন্বিত আইটেমগুলোকে বা দফাগুলোকে যে জাবেদা দাখিলার মাধ্যমে হিসাবভুক্ত করা হয় তাকে সমন্বয় জাবেদা বলা হয়। হিসাবকাল শেষে হিসাবসমূহের উদ্বৃত্তকে হালনাগাদ করার জন্য যে জাবেদা দাখিলা দেয়া হয় তাকে সমন্বয় দাখিলা বলা হয়।
সহজ কথায় বলা যায়, কোন নির্দিষ্ট হিসাবকালের বকেয়া আয়, বকেয়া বায় বা খরচ, অগ্রিম প্রদত্ত খরচ, অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি, অবচয় ইত্যাদি বিষয়সমূহকে সংশ্লিষ্ট হিসাবখাতের সাথে সমন্বয়সাধন (যোগ বা বিয়োগ) করার জন্য যে দাখিলা ব্যবহার করা হয় তাকে সমন্বয় দাখিলা বলা হয়।
সমন্বয় জাবেদা দাখিলার বৈশিষ্ট্য
সমন্বয় জাবেদা দেওয়ার উদ্দেশ্য ও সমন্বয় জাবেদা দাখিলার বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো-
সাধারণত নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে সমন্বয় দাখিলা দেয়া হয় । (হিসাবকাল সাধারণত ১ মাস, ৩ মাস, ৬ মাস, বা ১ বছর সময়কে বুঝায়)
সমন্বয় দাখিলা কখনো নগদকে প্রভাবিত করে না।
বকেয়া ও অগ্রিম আয়ব্যয়, অলিপিবদ্ধকৃত ও অনুমিত লেনদেনের জন্য সমন্বয় জাবেদা দেওয়া হয়।
সমন্বয় জাবেদা আয়ব্যয় বিবরণী ও উদ্বৃত্তপত্র উভয়কেই প্রভাবিত করে।
মূলত একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের সঠিক আর্থিক ফলাফল নির্ণয়ের জন্য সমন্বয় দাখিলা দেওয়া হয়।
সমন্বয় দাখিলা কত প্রকার/ প্রকারভেদ
সমন্বয় দাখিলা কত প্রকার ? / সমন্বয় জাবেদা কত প্রকার
সমন্বয় দাখিলাকে প্রধানত অগ্রিম ও বকেয়া এই দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেককে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়। নিচে সমন্বয় জাবেদার শ্রেণিবিভাগ ছকে দেখানো হলোঃ
সমন্বয় জাবেদার নিয়ম
সমন্বয় জাবেদার প্রকারভেদ ও সমন্বয় জাবেদা করার নিয়ম নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
১. অগ্রিম দফাসমূহ
ক. অগ্রিম খরচসমূহঃ যে সকল খরচ নগদে প্রদান করা হয় এবং ব্যবহারের পূর্বে সম্পত্তি হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয় সে সমস্ত খরচকে অগ্রিম প্রদত্ত খরচ বলা হয়।
যেমন- অগ্রিম প্রদত্ত বীমা ৬,০০০ টাকা এর মধ্যে চলতি হিসাবকালে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪,৫০০ টাকা।
এক্ষেত্রে সমন্বয়, দাখিলা হবে নিম্নরূপ :
খ. অগ্রিম আয়সমূহঃ কোন গ্রাহক যখন পণ্য বা সেবা প্রাপ্তির পূর্বেই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে নগদ অর্থ অগ্রিম প্রদান করে থাকে, সেক্ষেত্রে অগ্রিম আয় বা অনুপার্জিত আয় সৃষ্টি হয়।
যেমন- অনুপার্জিত আয় (Unearned revenue) ১২,০০০ টাকা এর মধ্যে এ বছর আয় হয়েছে ১,০০০ টাকা।
এক্ষেত্রে সমন্বয় জাবেনা হবে নিম্নরূপ :
২. বকেয়া দফাসমূহ
ক. বকেয়া খরচসমূহঃ খরচ সংঘটিত হয়েছে কিন্তু পরিশোধ করা হয়নি এরূপ খরচকে বকেয়া খরচ বলে। যেমন- বেতন, ভাড়া, কর, সুদ বকেয়া হতে পারে। সমন্বয় জাবেনা করার সময় খরচ হিসাব ডেবিট হবে এবং দায় হিসাব ক্রেডিট হবে।
যেমন- বেতন বকেয়া আছে ৪,০০০ টাকা।
সমন্বয় দাখিলা হবে নিম্নরূপ :
খ. বকেয়া আয়সমূহঃ সেবা প্রদান করা হয়েছে অর্থাৎ আয় অর্জিত হয়েছে কিন্তু এখনো টাকা পাওয়া যায়নি তাই আয় বকেয়া রয়েছে। এরূপ বকেয়া আয় সমন্বয় দাখিলার সময় সম্পদ ও আয় উভয়ই বৃদ্ধি পায়।
যেমন- আইনি সেবা প্রদান বাবদ ৫০০ টাকা এখনো পাওনা রয়েছে।
সমন্বয় দাখিলা হবে নিম্নরূপ :
সমন্বয় জাবেদার উদাহরণ
Click to see the ANSWER
উত্তর দেখার জন্য নিচের লেনদেন / ENTRY গুলোর উপরে ক্লিক করুন।
মুনাফাবিহীন বিক্রয় ৫,০০০ টাকা । (সাধারণ জাবেদা)
মূনাফাবিহীন পণ্য বিক্রয় জাবেদা
বিবরণ | ডেবিট টাকা | ক্রেডিট টাকা |
নগদান হিসাব ডেঃ ক্রয় হিসাব ক্রেঃ (বিনামূল্যে পণ্য বিতরণ সমন্বয় করা হলো) | ৫,০০০ | ৫,০০০ |
ব্যখ্যাঃ এখানে মুনাফাবিহীন বিক্রয় করা হয়েছে অর্থাৎ আমি পণ্য বিক্রয় করেছি এবং নগদে টাকাও পেয়েছি কিন্তু এই বিক্রয়ের দ্বারা আমার কোন মুনাফা হয় নি । তাই আমি যেহেতু টাকা পেয়েছি তাই নগদান হিসাবকে ডেঃ করবো আবার যেহেতু আমার ক্রয়কৃত পণ্য কমে গিয়েছে তাই ক্রয় হিসাব কে ক্রেডিট করবো।
মুনাফাবিহীন বিক্রয় ৫,০০০ টাকা বিক্রয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। (সমন্বয় জাবেদা)
মুনাফাবিহীন বিক্রয় জাবেদা –
বিক্রয় হিসাব > ডেঃ ৫,০০০/-
ক্রয় হিসাব > ক্রেঃ ৫,০০০/-
ব্যখ্যাঃ এখানে মুনাফাবিহীন বিক্রয় এর জন্য ক্রয় হিসাবকে ক্রেডিট না করে বিক্রয় হিসাবকে ক্রেডিট করেছে। তাই এটি ঠিক করার জন্য বিক্রয় হিসাবকে ডেবিট করে ক্রয় হিসাবকে ক্রেডিট করতে হবে।
বিজ্ঞাপন খরচ ১০,০০০ টাকা । (সাধারন জাবেদা)
বিজ্ঞাপন খরচ জাবেদা –
বিজ্ঞাপণ হিসাব > ডেঃ ১০,০০০/-
নগদান হিসাব > ক্রেঃ ১০,০০০/-
বিজ্ঞাপনের ১/২অংশ (৫,০০০ টাকা) বিলম্বিত করতে হবে। (সমন্বয় জাবেদা)
বিলম্বিত বিজ্ঞাপন জাবেদা –
বিলম্বিত বিজ্ঞাপন হিসাব > ডেঃ ৫,০০০/-
বিজ্ঞাপন হিসাব > ক্রেঃ ৫,০০০/-
সমাপনী মজুদ পণ্য ১০,০০০ টাকা। (সমন্বয় জাবেদা)
সমাপনী মজুদ পণ্য জাবেদা –
সমাপনী মজুদ পণ্য >> ডেঃ ৫,০০০/-
ক্রয় হিসাব >> ক্রেঃ ৫,০০০/-
ধারে পণ্য ক্রয় ৫,০০০ টাকা যা হিসাবভুক্ত হয়নি এবং সমাপনী মজুদেরও অন্তর্ভুক্ত হয়নি। (সমন্বয় জাবেদা)
সমাপনী মজুদ পণ্য জাবেদা –
১. ক্রয় হিসাব >> ডেঃ ৫,০০০/-
প্রদেয়/ বি: পাওনাদার হিসাব >> ক্রেঃ ৫,০০০/-
২. সমাপনী মজুদ পণ্য >> ডেঃ ৫,০০০/-
ক্রয় হিসাব >> ক্রেঃ ৫,০০০/-
আগুনে বিনষ্ট পণ্য জাবেদা –
আগুনে বিনষ্ট পণ্য >> ডেঃ ৫,০০০/-
ক্রয় হিসাব >> ক্রেঃ ৫,০০০/-
ব্যাখ্যাঃ এখানে পণ্য আগুনে নষ্ট হয়ে গিয়েছে আর্থাৎ আমার ক্ষতি হয়েছে । ক্ষতি একটি ব্যয় আর ব্যয় বাড়লে ডেঃ অপর দিকে আমার ক্রয়কৃত পণ্য কমে গিয়েছে তাই ক্রয় হিসাবকে ক্রেঃ করতে হবে।
সমাপনী মজুদ পণ্য ও আগুনে বিনষ্ট পণ্য জাবেদা –
১. সমাপনী মজুদ পণ্য >> ডেঃ ৩০,০০০/-
ক্রয় হিসাব >> ক্রেঃ ৩০,০০০/-
২. আগুনে বিনষ্ট পণ্য >> ডেঃ ১০,০০০/-
ক্রয় হিসাব >> ক্রেঃ ১০,০০০/-
ব্যখ্যাঃ এখানে আগুনে বিনষ্ট পন্যের জাবেদা হবে দুইটি, কারণ পণ্য আগুনে বিনষ্ট হওয়ার সাথে সাথে আমার ক্রয়কৃত পণ্যের ক্ষতি হয়ে গেল সেটি জাবেদায় লিপিবদ্ধ করতে হবে(ক্রয়কে ক্রেডিট করে); আবার বিমা কোম্পানি যেহেতু ক্ষতিপূরুণ দিতে রাজি হয়েছে তাহলে আমি ভবিষ্যতে এই ক্ষতিপুরণের টাকা বীমা কোম্পানির কাছ থেকে পাবো সেটিও জাবেদায় লিপিবদ্ধ করতে হবে।
সমাপনী মজুদ পণ্য ও আগুনে বিনষ্ট পণ্য জাবেদা –
১. সমাপনী মজুদ পণ্য >> ডেঃ ২০,০০০/-
ক্রয় হিসাব >> ক্রেঃ ২০,০০০/-
২. আগুনে বিনষ্ট পণ্য >> ডেঃ ১০,০০০/-
ক্রয় হিসাব >> ক্রেঃ ১০,০০০/-
৩. প্রাপ্য বিমা দাবি হি: >> ডেঃ – ১০,০০০/-
আগুনে বিনষ্ট পণ্য হি: >> ক্রেঃ – ১০,০০০/-
আগুনে বিনষ্ট পণ্য ৫,০০০ টাকা। বীমা কোম্পানি ১,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি স্বীকার করেছে।
আগুনে বিনষ্ট পণ্য জাবেদা
১. আগুনে বিনষ্ট পণ্য >> ডেঃ ৫,০০০/-
ক্রয় হিসাব >> ক্রেঃ ৫,০০০/-
৩. প্রাপ্য বিমা দাবি হি: >> ডেঃ – ১,০০০/-
আগুনে বিনষ্ট পণ্য হি: >> ক্রেঃ – ১,০০০/-
১০% হারে আসবাবপত্রের উপর অবচয় ধার্য করতে হবে। (রেওয়ামিলে আসবাবপত্রের পরিমাণ ৪০,০০০ টাকা।)
অবচয় জাবেদা –
অবচয় হিসাব >> ডেঃ – ৪,০০০/-
আসবাবপত্র/অবচয় সঞ্চিতি হিঃ >> ক্রেঃ – ৪,০০০/-
আরও পড়ুন —- হিসাব বিজ্ঞানের নীতিমালা