আসসালামুয়ালাইকুম , আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আজকে আমরা কমার্সের খুব গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো সেটি হচ্ছে ব্যাংক নিয়ে। আলোচনার বিষয়বস্তু হলো – ব্যাংক কি / ব্যাংক কাকে বলে ? ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য , ব্যাংকের কার্যাবলী , ব্যাংক ও ব্যাংকিং এর মধ্যে পার্থক্য । খুব সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় এই বিষয়গুলো আলোচনা করতে চেষ্টা করেছি আশা করছি সবার ভালো লাগবে ।
ব্যাংক কি
প্রাচীন ল্যাটিন শব্দ Banco, Bangk, Banque, Bancus প্রভৃতি শব্দ থেকে Bank শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। ব্যাংক শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো- নদী বা জলাশয়ের তীর, জমির আইল, কোষাগার, ধনভাণ্ডার, লম্বা টুল ইত্যাদি। তবে বর্তমানে অর্থ বিনিময় ব্যবসায়ে লিপ্ত প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক বলা হয়।
ব্যাংক কাকে বলে
ব্যাংক বলতে এমন একটি আর্থিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়, যার প্রধান কাজ হলো জনগণের অব্যবহৃত বা উদ্বৃত্ত অর্থ সংগ্রহ করা এবং যাদের প্রয়োজন তাদেরকে বিভিন্ন খাতে ঋণদান করা।
ব্যাংক দ্বারা এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যার কাজ হলো অর্থ জমা রাখা, ঋণ দেওয়া এবং অর্থসংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে লিপ্ত থাকা। ব্যাংক জনগণের কাছ থেকে স্বল্প সুদের বিনিময়ে আমানত গ্রহণ করে এবং ঐ আমানতকৃত অর্থ অধিক সুদে বা লাভে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে থাকে। সুদ বা লাভের এই পার্থক্যই হলো ব্যাংকের মুনাফা।
সুতরাং আমরা বলতে পারি –
(১) ব্যাংক একটি মধ্যস্থকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
(২) ব্যাংক ব্যবসায়ের প্রধান উপাদান বা সওদা হলো অর্থ।
(৩) এটি জনসাধারণের আমানত সংগ্রহ করে ।
(৪) সেই আমানত আবার ঋণ হিসেবে প্রদান করে সুদ গ্রহণ করে
(৭) এটি চেক, নোট, ড্রাফট প্রভৃতি বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি করে
(৮) এটি বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে ।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, ব্যাংক শুধু জনগণের ছড়ানো- ছিটানো অলস অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণই করে না, সেই অর্থ ঋণ প্রদানের মাধ্যমে মুনাফাও অর্জন করে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জনকল্যাণে নিয়োজিত থাকে।
ব্যাংকিং কী
ইংরেজি ‘Banking’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ব্যাংকের কার্যাবলি । ব্যাংকের টাকা জমা গ্রহণ ও ধার দেওয়ার কাজকেই ইংরেজিতে ব্যাংকিং বলে । সাধারণত ব্যাংক যা করে তাই ব্যাংকিং। অর্থাৎ ব্যাংক কর্তৃক দৈনন্দিন যেসব ব্যবসায়িক কার্য সম্পন্ন হয় সামগ্রিকভাবে তাকেই ব্যাংকিং বলা হয়। সুতরাং ব্যাংকের যাবতীয় কর্মকান্ডের সার্বিক রূপকেই ব্যাংকিং বলা হয় ।
ব্যাংক ও ব্যাংকিং এর মধ্যে পার্থক্য
ব্যাংক হলো একটি আর্থিক মধ্যস্থকারী প্রতিষ্ঠান আর ব্যাংকিং হলো ঐ প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি। প্রতিষ্ঠান ব্যতীত কার্যাবলি, চলে না আবার কার্যাবলি ব্যতীত প্রতিষ্ঠান চলে না। অনেকে ব্যাংক ও ব্যাংকিং শব্দ দুটিকে একই অর্থে ব্যবহার করলেও এদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। সেগুলো হলো-
- ব্যাংক হলো এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা জনগণের নিকট থেকে অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করে, ঋণ দেয়, অর্থ স্থানান্তর করে, ঋণ আমানত সৃষ্টি করে ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যাদি সম্পন্ন করে। অন্যদিকে ব্যাংক তার উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে সকল কার্য সম্পন্ন করে তাকে ব্যাংকিং বলে।
- ব্যাংক অর্থ হলো অধিকোষ, ব্যাংকিং শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ব্যাংকের কার্যাবলি।
- ব্যাংকারগণই ব্যাংকের সৃষ্টি করেন। অন্যদিকে ব্যাংক হতে ব্যাংকিং এর উৎপত্তি।
- আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক আর্থিক কার্যাবলি সম্পাদন করে। অন্যদিকে ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যাবলি যা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো।
- আইনের দ্বারা ব্যাংকের বিলোপসাধন ঘটে। ব্যাংকের বিলোপসাধন দ্বারা ব্যাংকিং এর বিলুপ্তি ঘটে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি ব্যাংক হলো একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান আর সেই প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলীকেই ব্যাংকিং বলে ।
ব্যাংকার কে
সাধারণত ব্যাংক ব্যবসায়ে নিয়োজিত ব্যক্তিকেই ব্যাংকার বলা হয়। অর্থাৎ যিনি ব্যাংকের যাবতীয় কার্য সুসম্পন্ন করেন অথবা যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যাংকের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পাদিত হয় তিনিই অথবা উক্ত প্রতিষ্ঠানকেই ব্যাংকার বলে ।
ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য
ব্যাংক একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিয়ামক। মানবসভ্যতার গোড়া থেকেই বিশ্বের সর্বত্র কোনো না কোনোভাবে ব্যাংক ব্যবসায় এর প্রচলন হয়ে আসছে। একটি আর্থিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অপেক্ষা ব্যতিক্রমধর্মী কাজ সম্পাদন করে থাকে। এখন দেখে নেই আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আধুনিক ব্যাংকের কোন বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে
১. গঠন : দেশের প্রচলিত কোম্পানি আইন বা ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী ব্যাংক গঠন করতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংক সরকার কর্তৃক বিশেষ অধ্যাদেশ বা আইন দ্বারাও প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী ব্যাংকসমূহ গঠিত হয়ে থাকে।
২. মালিকানা: ব্যাংকের মালিকানা বিভিন্ন প্রকৃতির হতে পারে । ব্যাংক সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং সরকারি-বেসরকারি যৌথমালিকানায় গঠিত হতে পারে। এছাড়াও ব্যাংক একমালিকানা, অংশীদারি, যৌথমূলধনী ও সমবায় সংগঠনরূপেও সংগঠিত হতে পারে।
৩. উদ্দেশ্য : ব্যাংকের উদ্দেশ্য হচ্ছে ঋণ ব্যবসায়ের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংক সেবার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়ে থাকে।
৪. পরিচালনা পদ্ধতি : দেশে প্রচলিত ব্যাংকিং আইন, সাংগঠনিক নিয়ম ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক বিশেষ অধ্যাদেশ বা আইন দ্বারা ব্যাংকসমূহ পরিচালিত হয়ে থাকে। যেমন, বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী এদেশে ব্যাংকসমূহ পরিচালিত হয়।
৫. আমানত গ্রহণ: ব্যাংকের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো আমানত গ্রহণ করা। ব্যাংক জনসাধারণ, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের সঞ্চিত অর্থ বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমানত হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।
৬. ঋণ প্রদান : ব্যাংক গ্রাহকদের গচ্ছিত আমানত এবং নিজস্ব তহবিল হতে গ্রাহক, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ প্রদান করে থাকে। ঋণ প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংক তাদের কাছ থেকে সুদ গ্রহণ করে ।
৭. মধ্যস্থব্যবসায় প্রতিষ্ঠান : ব্যাংক হলো একটি আর্থিক মধ্যস্থকারী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। কারণ ব্যাংক মধ্যস্থকারী হিসেবে আমানতকারী এবং ঋণগ্রহীতার মাঝখানে অবস্থান করে। ব্যাংক মূলত একপক্ষ থেকে আমানত গ্রহণ এবং অন্যপক্ষকে ঋণদানের কাজটি করে থাকে। তাই ব্যাংক হলো একটি মধ্যস্থব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।
৮. সেবা বিক্রয় : ব্যাংক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও মূলত এটি একটি আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে । কারণ আমানত গ্রহণ ও ঋণদান ছাড়াও ব্যাংক বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি, ইলেক্ট্রনিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান এবং লকার ভাড়াসহ অন্যান্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে গ্রাহকের প্রভূত কল্যাণ সাধন করে থাকে।
৯. বিশ্বস্ততার প্রতীক : ব্যাংক সততা ও বিশ্বাসের সঙ্গে আমানতকারীর অর্থ বা মূল্যবান সম্পদ জমা বা সংরক্ষণ করে থাকে। বলা চলে, ব্যাংক প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে গ্রাহকের আমানত নিরাপদে সংরক্ষণ করে আসছে এবং চাহিবামাত্র ফেরত প্রদানে বাধ্য রয়েছে। সুতরাং বলা যায়, ব্যাংক হলো বিশ্বস্ততার প্রতীক।
১০. অর্থনীতির চালিকাশক্তি : ব্যাংককে অর্থনীতির চালিকাশক্তি বলে আখ্যায়িত করা হয়। কেননা ব্যাংক অর্থনীতির প্রতিটি উপাদান যেমন—সঞ্চয়, মূলধন, বিনিয়োগ, উৎপাদন প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ প্রদান এবং বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাংক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করে।
১১. গোপনীয়তা রক্ষা: গ্রাহকের অনুমতি ব্যতীত বা আইনগত হস্তক্ষেপ ছাড়া ব্যাংক গ্রাহকের হিসাবসংক্রান্ত তথ্য কাউকে প্রদান করে না। ব্যাংক গ্রাহকের হিসাবের গোপনীয়তা রক্ষা করে চলে বিধায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংককে গোপনীয়তা রক্ষার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
১২. নিরাপত্তা প্রদান : ব্যাংকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে গ্রাহকদের জমাকৃত অর্থ ও ব্যাংকের নিজস্ব ঋণের নিরাপত্তা প্রদান করা। এ কারণে ব্যাংকসমূহকে সচ্ছলতা ও বিশ্বস্ততার সাথে ব্যাংকিং কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়।
১৩. ঝুঁকি : ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ঝুঁকি গ্রহণ। এক্ষেত্রে ব্যাংককে একটি দ্বিমুখী ঝুঁকিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। প্রথমত, আমানতকারীদের অর্থ সংরক্ষণ ঝুঁকি, দ্বিতীয়ত, ঋণ দিয়ে ঋণ আদায়সংক্রান্ত ঝুঁকি। অর্থাৎ ব্যাংককে আমানত গ্রহণ ও ঋণদান উভয় ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়ে ব্যাংকিং ব্যবসায় চালাতে হয়।
১৪. গ্রাহকদের প্রতিনিধিত্ব করা : ব্যাংক গ্রাহকদের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন খাত হতে অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। যেমন- মডেলের পক্ষে বিমা প্রিমিয়াম, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ এবং চেকের অর্থ ও কোম্পানির লভ্যাংশ আদায় করে । তাছাড়া যে ব্যাংক যত বেশি এসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়, সে ব্যাংক জনগণের নিকট তত বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়।
আরও পড়ুন >>> অর্থায়ন কি বা কাকে বলে ? ও এর কার্যাবলী
ব্যাংকের কার্যাবলী
ব্যাংক হলো এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যার প্রধান কাজ হলো জনগণের অব্যবহৃত বা উদ্বৃত্ত অর্থ সংগ্রহ করা এবং যাদের প্রয়োজন তাদেরকে ঋণ প্রদান করা। তাই ব্যাংককে আধুনিক অর্থনীতির স্নায়ুকেন্দ্র বলা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন ছাড়াও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের কার্য সম্পাদন করে থাকে। ব্যাংক দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে সকল কার্য সম্পাদন করে থাকে নিচে সেগুলো আলোচনা করা হলো:
১. আমানত গ্রহণ : ব্যাংক জনগণের নিকট বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকা সঞ্চিত অর্থ ও মূল্যবান সম্পদ আমানত হিসেবে সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে ব্যাংক জনসাধারণের উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংকে জমা রাখতে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করে ।
২ ঋণদান : ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য হলো ঋণদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা। এক্ষেত্রে ব্যাংক আমানত হিসেবে সংগৃহীত অর্থ ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও অন্যদেরকে ঋণ হিসেবে প্রদান করে থাকে। তবে ব্যাংক আমানতকৃত সমস্ত অর্থ ঋণ হিসেবে প্রদান না করে কিছু অর্থ তারা নিজের কাছে জমা রাখে।
৩. নোট ও মুদ্রা প্রচলন : লেনদেন কার্য সহজ ও গতিশীল করার জন্য ব্যাংক নোট ও মুদ্রার প্রচলন করে। এক্ষেত্রে এই নোট ও মুদ্রা প্রচলনের দায়িত্ব বা ক্ষমতা থাকে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর। আর অন্যান্য ব্যাংক বিশেষত বাণিজ্যিক ব্যাংক এই নোট ও মুদ্রার প্রসার কার্যক্রম এর সাথে জড়িত ।
৪. বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি : কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোট ও মুদ্রার প্রচলন করে এবং অন্যান্য ব্যাংক চেক, বিনিময় বিল, পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট, ভ্রমণকারীর চেক, প্রত্যাপত্র, চেক কার্ড, ডি.ডি. টি.টি ইত্যাদির মাধ্যমে বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি করে থাকে।
৫. অর্থ পরিশোধ : গ্রাহকগণ ব্যাংকে যে অর্থ জমা রাখে তা চাহিবামাত্র ফেরত দেওয়া ব্যাংকের একটি কাজ। ব্যাংক গ্রাহকদের এই আমানতি অর্থ চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবের মাধ্যমে পরিশোধ করে থাকে।
৬. মূলধন গঠন : ব্যাংক জনগণের নিকট বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উদ্বৃত্ত অর্থ সংগ্রহ করে মূলধন গঠনে সহায়তা করে। এটি ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর মাধ্যমে দেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হয়।
৭. বিনিময় বিলের বাটাকরণ : অনেক সময় ব্যবসায়ীরা তাদের জরুরি অর্থের প্রয়োজনে বিনিময় বিল, হুণ্ডি ইত্যাদি ভাঙিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। ব্যাংক তখন নির্দিষ্ট টাকা রাষ্ট্রার বিনিময়ে গ্রাহকদের বিল পূর্ণতা প্রাপ্তির পূর্বেই ভাঙিয়ে নেওয়ার সুযোগ প্রদান করে, যাকে বিনিময় বিলের বাট্টাকরণ বলে।
৮. ঋণ নিয়ন্ত্রণ : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে ঋণ দিয়ে থাকে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঋণ প্রদান করে দেশের মুদ্রা পরিস্থিতির ওপর এক বিরূপ প্রতিক্রিয়াও সৃষ্টি করে। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সকল ব্যাংকের অভিভাবক হিসেবে এ ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
৯. অর্থ স্থানান্তর : ব্যাংক বিশেষত বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিনিময় ব্যাংকসমূহ গ্রাহকদের প্রয়োজনে দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে অর্থ স্থানান্তর করে অর্থ বহনের ঝুঁকি হ্রাস করে থাকে। জনগণের অর্থ ও মূল্যবান সম্পদ নিরাপদে একস্থান হতে অন্যস্থানে, একদেশ হতে অন্যদেশে স্থানান্তরের মাধ্যমে ব্যাংক তাদের ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালনা করে।
১০. প্রতিনিধিত্বমূলক কার্যাবলি : গ্রাহকদের পক্ষে ব্যাংক যে সকল কাজ সম্পাদন করে তাকে ব্যাংকের প্রতিনিধিত্বমূলক কাজ বলে। ব্যাংক সাধারণ ব্যক্তি, ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোত্তাদের পক্ষ হয়ে দেশে এবং বিদেশে বিভিন্ন কার্য সম্পাদনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির গতি সচল রাখে।
১১. ব্যবসায়-বাণিজ্যে সহায়তা : ব্যাংক বিভিন্ন খাতে ঋণদান, গ্রাহকদের পক্ষে দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কার্য সম্পাদন করে একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে সহায়তা করে ঠিক তেমনি প্রত্যয়পত্র, ভ্রমণকারীর চেক, ব্যাংক ড্রাফট প্রভৃতি ইস্যু ও বিভিন্ন সেবা প্রদান করে বৈদেশিক বাণিজ্যকেও সচল রাখে।
১২. বিনিয়োগ : ব্যাংক শুধু বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ঋণই প্রদান করে না এর সাথে সাথে জনগণের সঞ্চিত অর্থ বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগও করে। এক্ষেত্রে ব্যাংক সরকারি ও বেসরকারি বন্ড, সিকিউরিটি, শেয়ার ইত্যাদি ক্রয় করে এবং বিভিন্ন লাভজনক খাতে বিনিয়োগে অংশ নেয়।
১৩. কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি: ব্যাংক দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও শিল্প সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন খাতে অর্থ বিনিয়োগ করে। এতে দেশে নতুন নতুন ব্যবসায়-বাণিজ্য ও শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। ফলশ্রুতিতে দেশের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এছাড়া ব্যাংক তাদের নতুন নতুন শাখা স্থাপনের মাধ্যমেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
১৪. মূল্যবান সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ: ব্যাংক জনগণের কাছে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকা অর্থগুলো সংরক্ষণ করা ছাড়াও তাদের মূল্যবান সম্পদ, যেমন: সোনা, রূপা, অলংকার, জমি ও অন্যান্য সম্পদের দলিলপত্র, মূল্যবান নথি ও কাগজপত্র, শেয়ার, সিকিউরিটিজ ইত্যাদি নিরাপদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যাংক তার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে আরামদায়ক ও সহজ করে তুলেছে। দিন দিন ব্যাংকের কার্যাবলির আওতা বেড়ে যাচ্ছে ।