আসসালামুও্যালাইকুম ! আশা করছি সকলেই খুব ভালো আছেন । আজকে আমরা বাংলা ব্যকরণের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো তাহলো – বাক্য কাকে বলে ? একটি সার্থক বাক্যের কয়টি অংশ থাকে ? একটি সার্থক বাক্যের কয়টি গুণ থাকে ? এই টপিকটি যেকোন পরীক্ষার জন্যই বেশি উপকারি । তাহলে চলুন শুরু করা যাক বাক্য কাকে বলে সেটা দিয়েই –
বাক্য কাকে বলে ?
এক বা একাধিক পদের মাধ্যমে বক্তার মনের ভাব সম্পুর্ণ্রুপে প্রকাশ পেলে তাকে বাক্য বলে ।
বাক্য ভাষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাক্যে ব্যবহৃত শব্দকে পদ বলে। একাধিক শব্দকে পাশাপাশি ব্যবহার করলেই বাক্য হয় না। বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত হলেই তা বাক্যের পর্যায়ে পড়ে।
উদাহরণ: বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র ।
এখানে ‘বাংলাদেশ’, ‘একটি’, ‘স্বাধীন’, ‘সার্বভৌম’, ‘রাষ্ট্র’- এ পাঁচটি পদ মিলে একটি সম্পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং এটি একটি বাক্য ।
যদি বলা হতো – “বাংলাদেশ একটি … ” তাহলে এই দুইটি পদ মিলে সম্পুর্ন মনের ভাব প্রকাশ পায় না ,তাই এটিকে বাক্যও বলা যাবে না ।
ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ তাঁর ‘বাঙ্গালা ব্যাকরণ’ গ্রন্থে বাক্যের সংজ্ঞার্থ প্রদান করেছেন এভাবে: “একটি সম্পূর্ণ মনোভাব যে সমস্ত পদ দ্বারা প্রকাশ করা যায়, তাদের সমষ্টিকে বাক্য বলে।”
মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মতে, “যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়, তাকে বাক্য বলে।”
তাহলে বলা যায়, অর্থবোধক একাধিক পদের সমন্বয়ে যখন বক্তার মনের ভাব পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়, তখন তাকে বাক্য বলে ।
সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এমন বাক্যে কর্তা ও ক্রিয়া থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্তা উহ্য থাকতে পারে। যেমন: যাও । খাও । শব্দগুলো গঠনের দিক থেকে একটিমাত্র শব্দের বাক্য হলেও এগুলোতে একাধিক শব্দের ব্যবহার রয়েছে।
যেমন-
যাও । বাক্যের অন্তর্নিহিত রূপ- তুমি যাও।
খাও । বাক্যের অন্তর্নিহিত রূপ- তুমি খাও।
একটি সার্থক বাক্যের কয়টি অংশ থাকে
প্রতিটি বাক্যের প্রধান অংশ থাকে দুটি। একটিকে বলা হয় বাক্যের উদ্দেশ্য এবং অপরটি বিধেয়।
উদ্দেশ্য: বাক্যে যাকে লক্ষ্য করে বা যার সম্বন্ধে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য বলা হয়।
যেমন- মেয়েটি পড়ছে। প্রদত্ত বাক্যে মেয়েটি উদ্দেশ্য । বাক্যের উদ্দেশ্য অংশে একাধিক পদও থাকতে পারে। যেমন- ‘সালমা, আরিফ, রিতা স্কুলে যায়।’
এখানে ‘সালাম’, ‘আরিফ’ ও ‘রিতা’ এই তিনটি পদ বাক্যের উদ্দেশ্য ।
বিধেয়: বাক্যের যে অংশে উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছু বলা হয় তাকে বিধেয় বলে।
যেমন- ছেলেরা খেলছে। প্রদত্ত বাক্যে ‘খেলছে’ বিধেয়। বাক্যের বিধেয় অংশের মূল হচ্ছে সমাপিকা ক্রিয়া ।
তবে অনেক সময় একাধিক ক্রিয়াও বিধেয় অংশে থাকতে পারে। যেমন- রহিম যেতে পারবে না। এই বাক্যে ‘যেতে পারবে না’ বিধেয়।
বাক্য দীর্ঘ হলে বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় সম্প্রসারিত হয়। যেমন-
উদ্দেশ্যের সম্প্রসারণ : রহমানের ভাই এসেছে ।
বিধেয় সম্প্রসারণ: কচ্ছপ ধীর গতিতে চলে ।
একটি সার্থক বাক্যের কয়টি গুণ থাকে ? বা
একটি সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্য লিখ ।
একটি বাক্যকে সার্থক ও শুদ্ধ হতে হলে কতগুলো গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার। এগুলো হচ্ছে-
১. আকাঙ্ক্ষা
২. আসত্তি এবং
৩. যোগ্যতা
১. আকাঙ্ক্ষা: ‘আকাঙ্ক্ষা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ- ইচ্ছা, বাসনা। বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণরূপে স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য একপদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছা তা-ই আকাঙ্ক্ষা। অর্থাৎ বলা যায়- শ্রোতার ইচ্ছা বা বাসনার নিবৃত্তি ঘটলেই সার্থক বাক্য গঠিত হয়।
যেমন- “আমরা গতকাল বই মেলায়”, বাক্যটিতে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করে না এবং শ্রোতার শোনার আকাঙ্ক্ষাও মেটে না। তাই বাক্যটি সার্থক নয়। কিন্তু ‘আমরা গতকাল বইমেলায় গিয়েছিলাম’ বাক্যটিতে বক্তার মনোভাব ও শ্রোতার আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি ঘটেছে। তাই বাক্যটি সার্থক।
২. আসত্তি: আসত্তি শব্দের অর্থ নৈকট্য। মনোভাব প্রকাশের জন্য বাক্যে শব্দগুলি এমনভাবে পরপর সাজাতে হবে যাতে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক থাকে এবং ভাষার নিয়ম অনুযায়ী নৈকট্য থাকে।
যেমন- “যাব আমি ভাত কলেজে খেয়ে”। এখানে কর্তা, কর্ম ও ক্রিয়া অনুযায়ী বাক্যগুলো সাজানো নেই। তাই এটি সার্থক বাক্য নয় । বরং একটি সার্থক বাক্য হতে হলে তা হবে- “আমি ভাত খেয়ে কলেজে যাব।” এই বাক্যটিতে সঠিক পদবিন্যাস থাকায় এটি সার্থক বাক্য।
৩. যোগ্যতা: বাকোর পদসমূহের অর্থগত ও ভাবগত মেলবন্ধনের নামই যোগ্যতা।
যেমন- “বর্ষাকালে জলপথে নৌকা চলে।” এটি একটি যোগ্যতা সম্পন্ন বাক্য। কারণ বাক্যটিতে পদসমূহের অর্থগত ও ভাবগত মিল রয়েছে। কিন্তু যদি বলা হয়- “বর্ষাকালে আকাশ পথে নৌকা চলে” তবে বাক্যটি ভাব প্রকাশের যোগ্যতা হারাবে। কারণ নৌকা আকাশ পথে চলে না। সার্থক বাক্যের জন্য অর্থ সংগতি বা যোগ্যতা থাকতে হবে।
আশা করছি আপনারা সবাই বাক্য কাকে বলে, একটি সার্থক বাক্যের কয়টি অংশ থাকে ? ও সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ঠ্য সম্পর্কে বুঝতে পেরেছি । আমাদের লেখা যদি ভালো লেগে থাকে অবশ্যই সকলের সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন । নিজে পড়ুন ও অন্যকেও পড়ার সুযোগ করে দিন ।
এখান থেকে যে ধরণের প্রশ্ন পরীক্ষায় সচরাচর আসে তা নিচে দেওয়া হলো-
১. বাক্য কাকে বলে ? বাক্যের কয়টি অংশ ও কী কী?
২. সার্থক বাক্যের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করুন।
৩. বাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় বলতে কী বোঝেন? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করুন।
কিছু গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
অর্থবোধক একাধিক পদের সমন্বয়ে যখন বক্তার মনের ভাব পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হয়, তখন তাকে বাক্য বলে ।
একটি সার্থক বাক্যের দুইটি অংশ থাকে । উদ্দেশ্য ও বিধেয় ।
একটি সার্থক বাক্যের তিনটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার। এগুলো হচ্ছে-
১. আকাঙ্ক্ষা
২. আসত্তি এবং
৩. যোগ্যতা
একটি সার্থক বাক্যের তিনটি গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার। এগুলো হচ্ছে-
১. আকাঙ্ক্ষা
২. আসত্তি এবং
৩. যোগ্যতা
বাক্যের অর্থ সম্পূর্ণরূপে স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য একপদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছা তা-ই আকাঙ্ক্ষা।
মনোভাব প্রকাশের জন্য বাক্যে শব্দগুলি এমনভাবে পরপর সাজাতে হবে যাতে পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক থাকে এবং ভাষার নিয়ম অনুযায়ী নৈকট্য থাকে।
বাকোর পদসমূহের অর্থগত ও ভাবগত মেলবন্ধনের নামই যোগ্যতা।