মানুষকে দিয়ে কখনই জোর করে কাজ আদায় করা যায় না। এজন্যে মানুষের কাছ থেকে কাজ আদায় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশল গ্রহণ করতে হয়। ব্যবস্থাপনার সাতটি কাজের মধ্যে প্রেষণা হচ্ছে এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া যা মানুষের মনের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করে । প্রেষণা কর্মীদের কাজ করতে শক্তি, সাহস, উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করে থাকে। আজকে আমরা প্রেষণা কি বা কাকে বলে এবং প্রেষণার বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানবো ।
প্রেষণা কি ?
প্রেষণা কি : ইংরেজি Motivation শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে প্রেষণা। ইংরেজি Motivation শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Movere থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো To Move অর্থাৎ কর্মতৎপর বা গতিশীল করা। এর অর্থগত দিক থেকে প্রেষণা বলতে কাউকে কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করাকে বোঝায়।
প্রেষণা কাকে বলে ?
“প্রেষণা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে ব্যক্তির কাজকে প্রভাবিত করার একটি প্রক্রিয়া।”
“যে মানসিক প্রক্রিয়া উৎসাহ দানের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে তার সর্বোচ্চ কাজ আদায় করতে পারে তাকে প্রেষণা বলে।”
“প্রেষণা বলতে ব্যক্তির এমন একটি অবস্থানকে বোঝায় যা তাকে কাজে উৎসাহ প্রদান করে। প্রেষণা ব্যক্তিকে উদ্যমশীল, সক্রিয় ও লক্ষ্যপানে ধাবিত করে ।”
উধাহরণ
জনাব নূর হোসেন একটি উৎপাদনধর্মী প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যবস্থাপক। তিনি তার প্রতিষ্ঠানে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ১০,০০,০০০ পিস মাল সরবরাহের ফরমায়েশ পেয়েছেন। সেই অনুযায়ী তিনি কর্মীদের কাজের নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু তিনি তিন মাস পর লক্ষ করলেন কারখানায় মাত্র ২,০০,০০০ পিস মাল উৎপাদন হয়েছে। তাই জনাব নুর হোসেন তার বন্ধুর সাথে পরামর্শ করে কর্মীদের বেতন বাড়িয়ে দেন এবং অতিরিক্ত কাজের জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক প্রদান করবেন বলে আশ্বাস দেন। এতে করে দেখা যায় অবশিষ্ট তিন মাসের মধ্যে বাকি ৮,০০,০০০ পিস মাল উৎপাদিত হয়ে যায়। তার এসকল কর্মকান্ডগুলো প্রেষণার অন্তর্ভুক্ত, যা প্রেষণা কর্মীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
অধ্যাপক R.W. Griffin-এর মতে, “Motivation is the set of forces that cause people to behave in certain ways.”
অধ্যাপক Martin J. Gannon-এর মতে, “Motivation basically means an individual’s needs, desires and concepts that cause him or her to act in a particular manner.” অর্থাৎ, প্রেষণার অর্থ মূলত ব্যক্তির প্রয়োজন, আকাঙ্ক্ষা ও ধারণা, যা তাকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে কাজ সম্পাদনে উৎসাহ দেয় ।
প্রেষণা কি তা নিমোক্ত সমীকরণের সাহায্যে প্রকাশ করা যেতে পারেঃ-
P=M (A+K)
P= Performance; M= Motivation; A= Ability; এবং K= Knowledge;
একজন কর্মীর কার্যক্রম শুধু তার ক্ষমতা ও জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল নয়; বরং এটি অনেকাংশে নির্ভর করে প্রেষণার ওপর।
উপরিউক্ত আলোচনা ও সংজ্ঞা হতে প্রেষণার নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায়:
- ( প্রেষণা কি ) প্রেষণা একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া;
- এটি মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করে;
- এর মাধ্যমে কর্মীর কাজে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন >>> নেতৃত্ব কি বা কাকে বলে ? নেতৃত্বের বৈশিষ্ঠ্য ও নেতৃত্বের গুরুত্ব !
প্রেষণার বৈশিষ্ট্য Features/Characteristics of Motivation
প্রেষণা কি তা ভালো করে বুঝতে হলে প্রেষণার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে । প্রেষণা মানুষের আচরণকে সক্রিয় ও গতিশীল করে। যার ফলে সে কোনো কাজ করতে বা না করতে বাধ্য থাকে। নিচে প্রেষণার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. মনস্তাত্ত্বিক ধারণা (Mental idea)
প্রেষণা একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। এটি কর্মীদের মন-মানসিকতার সাথে সম্পর্কিত। ব্যবস্থাপনার পক্ষে অনেক সময় কর্মীদের মানসিকতা অনুধাবন করা সম্ভব হয় না। প্রেষণা কর্মীর চাহিদা এবং প্রাপ্তির মধ্যে সমন্বয়সাধন করে। সাধারণত কোনো বিশেষ চাহিদার কারণে একজন ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছা সৃষ্টি হয়।
২. মানুষের অভাব থেকে সৃষ্টি (Originated from human want)
প্রেষণা ব্যক্তির অভাবকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। মূলত অভাব থেকেই প্রেষণার সৃষ্টি। ব্যক্তির মধ্যে অভাবের অস্তিত্ব না থাকলে প্রেষণার প্রয়োজন হতো না। অভাবই হচ্ছে প্রেষণার ভিত্তি।
৩. লক্ষ্যকেন্দ্রিক (Goal oriented)
লক্ষ্যকেন্দ্রিকতা প্রেষণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা। উৎপাদনের সাথে বিভিন্ন পক্ষ জড়িত থাকে। প্রেষণার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের প্রয়োজন মিটিয়ে লক্ষ্যার্জনের চেষ্টায় ব্যাপৃত থাকে।
৪. মনের ওপর প্রভাব (Influence of mind)
প্রেষণা মানুষের মনের উপর উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলে। সেজন্য প্রেষণাকে অভ্যন্তরীণ শক্তি বলে। অর্থাৎ, শ্রমিক-কর্মীদের মনের মধ্যে কীভাবে সংগঠন ও সংগঠনের কাজ সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব গড়ে তোলা যায় সেটাই এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়। তাই বলা হয়, Motivation is an internal force.
৫. অবিরত প্রক্রিয়া (Continuous process)
প্রেষণা একটি অবিরত প্রক্রিয়া। প্রতিষ্ঠানের সবসময় প্রত্যাশা শ্রমিক- কর্মিগণ উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে কাজ করুক। সেজন্য সংগঠন সর্বদাই শ্রমিকদের মধ্যে নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎসাহ সৃষ্টির প্রয়াস চালায়।
৬. কাজের শক্তি (Work force)
প্রেষণা এমন একটি শক্তি যা কোনো কর্মীকে কিছু করতে বা কাজ হতে বিরত থাকতে অনুপ্রাণিত করে। প্রেষণার মাধ্যমে কর্মীর ইচ্ছাশক্তি জাগিয়ে তোলা সম্ভব। ফলে কর্মীর সর্বাত্মক প্রচেষ্টাকে কাজে লাগিয়ে দলীয় লক্ষ্য অর্জন করা সহজ হয়।
৭. ইতিবাচক বা নেতিবাচক (Positive or negative)
কার্যক্ষেত্রে প্রেষণা ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক যেকোনো ধরনের হতে পারে। তাই বাস্তবে দেখা যায়, কাউকে কোনো প্রশংসা ও পুরস্কৃত করে প্রেষিত করা যায়। আবার কাউকে তিরস্কার ও শাস্তির ভয় দেখিয়ে কাজ আদায় করে নিতে হয়।
৮. জটিল ব্যবস্থাপকীয় কাজ (Critical management function)
প্রেষণা একটি জটিল ব্যবস্থাপকীয় কাজ। ব্যবস্থাপনা কাজ সম্পাদন করতে মানুষ অর্থ, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি উপাদান ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে মানুষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল উপাদান। কারণ অন্যান্য উপাদানের মতো সহজেই মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও একাগ্রতা বিশ্লেষণ করা যায় না।
৯. অনুপ্রাণিত করা (Motivate)
প্রেষণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কর্মীদেরকে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করা। কর্মীরা তাদের চাহিদা মেটানোর পর আর কাজে উদ্যমী হয় না; কিন্তু প্রেষণা কার্যসম্পাদনে অনুপ্রাণিত করে।
১০. পরিস্থিতি নির্ভর (Situation based)
প্রতিটি ব্যক্তিরই ইচ্ছা, চিন্তা-চেতনা, পছন্দ-অপছন্দ, বুচি-অভ্যাস, প্রবণতা, অভাব-অভিযোগ প্রভৃতি অন্যদের থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিটি ব্যক্তিকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ব্যক্তিকে প্রেষিত করতে হয়। এজন্য পরিবেশ-পরিস্থিতি ও ব্যক্তিভেদে প্রেষণা পদ্ধতিতে বৈসাদৃশ্য দেখা যায়।
১১. অনুমাননির্ভর (Prediction based)
ব্যবস্থাপনার কাজ সম্পাদনে মানুষ, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, অর্থ, কৌশল, বাজার প্রভৃতি উপাদান ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মধ্যে মানুষ বা মানবসম্পদ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল উপাদান বলে গণ্য। মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, গুণাবলি, আচরণ, যোগ্যতা, কাজের প্রতি আগ্রহ ও একাগ্রতা প্রভৃতি সহজে ও নির্ভুলভাবে বিচার- বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়। তাই কর্মীদের প্রেষণা দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে অনেকটা অনুমানের ভিত্তিতে কাজ করতে হয়।
প্রেষণার গুরুত্ব Importance of Motivation
ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হচ্ছে কর্মীদেরকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে বস্তুগত উপাদানসমূহ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জন নিশ্চিত করা। কর্মীদের মানসিক উৎসাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে কাছ আদায়ে প্রেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হিসেবে স্বীকৃত। প্রেষণা যেসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নিচে সেগুলো বর্ণনা করা হলো:
১. দক্ষতা বৃদ্ধি (Increase in efficiency)
প্রেষণা কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে। কোনো কাজ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলে কর্মীরা কর্মস্পৃহা নিয়ে কাজ করবে ফলে তার দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে কাজের গুণগত মানের উন্নয়ন ঘটে । প্রেষণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি করতে হলে একজন নেতার ভালো গুনাবলী থাকা প্রয়োজন ।
২. উৎপাদন বৃদ্ধি (Increasing production)
প্রেষণার ফলে কর্মীদের মনোভাব ইতিবাচক থাকে। ফলে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। আর দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মীদের আন্তরিকতাও বৃদ্ধি পায়। ফলে উৎপাদনের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। একটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে উৎপাদন মাত্রা বৃদ্ধি করা। প্রেষণার মাধ্যমে শ্রমিক- কর্মীদের অনুপ্রাণিত করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়।
৩. মানবশক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার (Maximum use manpower)
প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জনশক্তি যত দক্ষ ও যোগ্যই হোক না কেন কর্মক্ষেত্রে যদি তারা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত না হয় তবে তাদের নিকট থেকে কাঙ্ক্ষিত কার্যফল প্রত্যাশা করা সম্ভব নয়। এজন্যই আধুনিক লেখকগণ কর্মসম্পাদনের বিষয়টিকে নিম্নোক্ত সমীকরণের সাহায্যে উপস্থাপন করেছেন:
কর্মসম্পাদন (Performance) = প্রেষণা (কর্মীর সামর্থ্য কর্মীর জ্ঞান)
অথবা, P=M(A+K)
যেখানে- P= Performance, M= Motivation, A= Ability, K = Knowledge অর্থাৎ কর্মীর সামর্থ্য ও জ্ঞানের যথাযথ প্রয়োগ প্রেষণার ওপর নির্ভরশীল ।
৪. কর্মীর মনোবল উন্নয়ন (Development of employee morale)
কর্মীদের উচ্চ মনোবল গঠনে প্রেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ উত্তম প্রেষণা উচ্চ কার্যসন্তুষ্টির সৃষ্টিতে সহায়তা করে। আর এরূপ সন্তুষ্টি মনোবলের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব বিস্তার করে। তাই প্রেষণা প্রতিষ্ঠানের এবং কাজের প্রতি কর্মীদের অধিক আন্তরিক করে তোলে এবং প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবিরোধী যেকোনো কার্যকলাপ থেকে বিরত রাখে। ফলে প্রতিষ্ঠানে একটি উত্তম কার্য পরিবেশের গড়ে ওঠে।
৫. উত্তম শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা (Establishing fair labour-management relation)
উত্তম শ্রম- ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। একমাত্র প্রেষণার দ্বারাই তা অর্জন করা যায়। কর্মীদের মানসিকভাবে যত সন্তুষ্ট রাখা যায় ব্যবস্থাপনার প্রতি তাদের ধারণা ও আন্তরিকতা তত বৃদ্ধি পায়। প্রেষণার অভাবে কর্মীরা আন্দোলনে নামে ও শ্রম-ব্যবস্থাপনা সম্পর্ক খারাপ হয়।
৬. অপচয় হ্রাস (Reduction of wastage)
কর্মীদের আচরণ এবং কাজের প্রতি একাগ্রতা তাদের অলস শ্রমঘণ্টাই হ্রাস করে না; বরং কাজের জন্য ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি ব্যবহারে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করে। ফলে প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক অপচয়রোধ করা সহজ হয়।
৭. সুষ্ঠু পরিচালনা (Proper direction)
প্রেষণার মাধ্যমে কর্মীদের উৎসাহী করতে পারলে প্রতিষ্ঠানে সুষ্ঠু কার্যপরিবেশ বজায় থাকে। আবার সুষ্ঠু পরিচালনা অনেকাংশে নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের মানবীয় সম্পর্কের কর্মকান্ডের উপর।
৮. কাজের গতিশীলতা বৃদ্ধি (Increase dynamism)
প্রেষণা কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধির মাধ্যমে কাজে আত্মনিয়োগে সুযোগ সৃষ্টি করে। ফলে কর্মীরা কাজে আগ্রহী হয়ে উঠে বলে প্রতিষ্ঠানে সার্বিক কর্মকান্ডে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।
৯. ভাবমূর্তি বৃদ্ধি (Increase of image)
প্রেষণার মাধ্যমে কর্মীদের উদ্যমতা বৃদ্ধি পায় এবং তারা তাদের কর্ম-প্রচেষ্টা পরিপূর্ণভাবে নিয়োজিত করতে পারে। ফলে প্রতিষ্ঠানের সফলতা অর্জিত হয় এবং সুনাম বৃদ্ধি পায়।
১০. পরিবর্তন সহজ হয় (Easy to change)
কর্মীদেরকে সঠিকভাবে অনুপ্রাণিত করা হলে ব্যবস্থাপনার প্রতি তাদের আস্থা বাড়ে এবং ব্যবস্থাপনার সিদ্ধান্তের প্রতি তারা অনুগত থাকে। ফলে হঠাৎ যেকোনো পরিবর্তন, উৎপাদনের নতুন পদ্ধতি, পদোন্নতি, নতুন নিয়ম, নতুন সংগঠন ও প্রশাসন প্রভৃতি প্রবর্তন সহজ হয়।
১১. জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন (Development of standard of living)
ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ায় প্রেষণার সুফল হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক উৎপাদন ও মুনাফা বৃদ্ধি পায়। যা পরোক্ষভাবে শ্রমিক-কর্মীদের পারিশ্রমিক ও আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
১২. শ্রম ঘূর্ণায়মানতা হ্রাস (Reducing labour turnover)
কর্মীর মনঃসন্তুষ্টি কাজে উৎসাহ যোগায়। ফলে কর্মী তার কর্মস্থল ত্যাগের চিন্তা-ভাবনা না করে কাজের প্রতি অধিক মনোযোগী হয়।
১৩. সৃজনশীলতার বিকাশ (Manifestation of creativity)
প্রেষণা কর্মীর মনোবল উন্নত করে। মনোবল উন্নত থাকায় কর্মীরা ব্যাপক গবেষণাকার্যে নিয়োজিত হয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন ঘটাতে সক্ষম হয়।
প্রেষণা কি এই নামক আর্টিকেল থেকে আমরা বলতে পারি, ব্যবস্থাপনার সকল পর্যায়ে প্রেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া উন্নত করেই কেবল প্রাতিষ্ঠানিক সাফল্য অর্জন সম্ভব। প্রেষণাদানের মাধ্যমেও কর্মীদের মানসিক ও কাজের মান উন্নয়ন সম্ভব।
FAQs
প্রেষণা অর্থ কি ?
ইংরেজি Motivation শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে প্রেষণা। ইংরেজি Motivation শব্দটি ল্যাটিন শব্দ Movere থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো To Move অর্থাৎ কর্মতৎপর বা গতিশীল করা।
প্রেষণা কাকে বলে ?
যে মানসিক প্রক্রিয়া উৎসাহ দানের মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে তার সর্বোচ্চ কাজ আদায় করতে পারে তাকে প্রেষণা বলে।
প্রেষণা কী / কি ?
অর্থগত দিক থেকে প্রেষণা বলতে কাউকে কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করাকে বোঝায়।
প্রেষণার সংজ্ঞা দাও
প্রেষণা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে ব্যক্তির কাজকে প্রভাবিত করার একটি প্রক্রিয়া।
প্রেষণা বলতে কি বুঝায় ?
প্রেষণা বলতে ব্যক্তির এমন একটি অবস্থানকে বোঝায় যা তাকে কাজে উৎসাহ প্রদান করে। প্রেষণা ব্যক্তিকে উদ্যমশীল, সক্রিয় ও লক্ষ্যপানে ধাবিত করে
কৃতি প্রেষণা কি / কোন ধরনের প্রেষণা ?
অনার্থিক প্রেষণা ।
প্রেষণা কি কর্মীর মনোবল বৃদ্ধি করে ?
হ্যাঁ করে ।