একজন আদর্শ নেতার গুণাবলী
Qualities of a Good Leader
নেতৃত্বের গুণাবলী কি কি ?
যিনি নেতৃত্ব দেন তিনিই নেতা । Bateman and Zemitha বলেন, “A leader is one who influence others to attain goals” অর্থাৎ, লক্ষ্য অর্জনের জন্য যিনি প্রভাবিত করেন তাকে নেতা বলা হয়। বিভিন্ন গুণের মাধ্যমে একজন নেতা তার অধস্তনদের নিকট আকর্ষণীয় ও সম্মানিত হয়ে ওঠেন। নেতৃত্বের গুণাবলী কি কি তা আলোচনা করতে গেলে আমরা তিনভাগে তা ভাগ করে নিতে পারি –
ক. ব্যক্তিক গুণাবলি
খ. মানসিক গুণাবলি ও
গ. পেশাভিত্তিক গুণাবলি
মুলত নেতৃত্বের গুনাবলিগুলোই নেতা হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা যায় ।
নেতৃত্বের গুণাবলিগুলো থাকলেই নেতা হওয়ার যোগ্যতা পরিপুর্ন হয় ।
আরও পড়ুন >>> নেতৃত্ব কি বা কাকে বলে ? নেতৃত্বের বৈশিষ্ঠ্য ও নেতৃত্বের গুরুত্ব !
ক. ব্যক্তিক গুণাবলি (Personal qualities)
১. শারীরিক ও মানসিক শক্তি (Physical and mental power): নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে একজন নেতাকে দৈহিক ও মানসিক শক্তির অধিকারী হতে হয়। কারণ একজন আদর্শ নেতাকে সকল কাজেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়। তাই সকল প্রতিকূল অবস্থায় তাকে মনোবল ঠিক রেখে কাজ করতে হয়।
২. আকর্ষণীয় ক্ষমতা (Attractive power): নেতাকে আকর্ষণীয় চেহারা ও তীক্ষ্ণদৃষ্টির অধিকারী হতে হয় যেন তাকে কেউ মানসিকভাবে অবহেলা না করতে পারে। ব্যক্তিত্ব সকল অধস্তনদের শ্রদ্ধাশীল করে তোলে।
৩. আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব (Attractive personality): নেতৃত্বের সফলতা অর্জনের জন্য একজন নেতাকে বলিষ্ঠ ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। ব্যক্তিত্বহীন মানুষকে কেউ পছন্দ করে না। একজন আদর্শ নেতার ব্যক্তিগত চরিত্র দৃঢ়স্থির হতে হবে। এমন ব্যক্তিত্বের অধিকারী হলে অধস্তনরা তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।
৪ . শিক্ষা (Education): শিক্ষা মানুষের মেধাশক্তিকে বিকশিত করে এবং সুদক্ষ নিষ্ঠার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নেতার একান্ত প্রয়োজন। তাই সুদক্ষ নেতৃত্বের জন্য নেতাকে সুশিক্ষিত হতে হবে।
৫. বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতাসম্পন্ন (Intelligence and wisdom) একজন আদর্শ নেতাকে অনেক বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হয়। এমনকি নানা ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই একজন নেতাকে অবশ্যই বিচক্ষণ হতে হয়।
খ. মানসিক গুণাবলি (Mental qualities)
১. সততা ও নিষ্ঠা (Honesty & sincerity): একজন নেতার সর্বোপরি যে গুণটি অধীনস্থদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে সেটা তার সততা ও নিষ্ঠা। সততা ও নিষ্ঠা না থাকলে অন্যরা তার নেতৃত্ব মানতে চায় না। তাই একজন নেতার সততা ও নিষ্ঠা থাকা আবশ্যক।
২. ধৈর্য (Patience): একজন আদর্শ নেতার ধৈর্য-সহ্যগুণ থাকা প্রয়োজন। কর্মীদের তুলনায় অধিক ধৈর্যের অধিকারী না হলে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব হয় না। ধৈর্যগুণের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানকে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।
৩. সাহসিকতা (Courageous): নেতাকে সর্বদা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়। তাছাড়া নতুন নতুন কর্মসূচি গ্রহণে উদ্যোগী হতে হয়। এজন্য নেতাকে সাহসী হতে হয়।
৪. ন্যায়পরায়ণতা (Uprightness): একজন নেতাকে অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ ও নিরপেক্ষ হতে হয়। কেননা অধস্তন কর্মিগণ নেতাকে অনুসরণ করে। তাই নেতাকে নিরপেক্ষ থেকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নেতা সবার প্রতি সমান বিচারক্ষমতা প্রয়োগ করবেন।
৫. দূরদর্শিতা (Foresightness): সঠিক পূর্বানুমানের ওপর প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ভরশীল। দূরদর্শিতার মাধ্যমে সঠিকভাবে পূর্বানুমান করা যায়। আর সঠিকভাবে পূর্বানুমান করার জন্য একজন আদর্শ নেতাকে অত্যন্ত দূরদর্শী হতে হবে।
৬. সহযোগিতার মনোভাব (Co-operations attitude’s): পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। তাই নেতাকে সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করতে হয়।
আরও পড়ুন >>> প্রশিক্ষণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা !
গ. পেশাভিত্তিক গুণাবলি (Professional qualities)
১. অভিজ্ঞতা (Experience): কোনো কাজের সাথে দীর্ঘদিন সংযুক্ত থেকে বাস্তবতার সাথে পরিচিত হওয়াই হচ্ছে অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতা থাকলে একজন নেতা সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম হয়। অভিজ্ঞতা অধস্তনদের মাঝে নেতার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। ফলে নেতার পক্ষে কর্মীদের আনুগত্য লাভ সহজ হয়।
২. পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা (Idea about environment): পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে নেতাকে কাজ করতে হয়। পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা থাকলে অন্যদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া ও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হয়।
৩. যোগাযোগ দক্ষতা (Communicate efficiency): নেতাকে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কর্মীদের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। একজন নেতা তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় যত বেশি দক্ষ ও উন্নত হবে তত দ্রুত তথ্য ও ভাব বিনিময় সহজ হবে এবং জটিল সমস্যার সমাধান করা যাবে।
৪. কারিগরি জ্ঞান (Technical knowledge): বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে কারিগরি বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে উন্নতমানের কার্যসম্পাদন সম্ভব নয়। তাই নেতার কারিগরি বিষয়ে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তা না হলে তার পক্ষে সাবলীলভাবে কার্য পরিচালনা করা দুরূহ।
৫. ব্যবস্থাপকীয় দক্ষতা (Managerial skill): একজন নেতা ব্যবস্থাপকও বটে। তাই নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নেতার ব্যবস্থাপকীয় কলাকৌশল, নিয়মকানুন প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।
৬. প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্ষমতা (Ability to train up): প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাজ সম্পর্কে নেতার ধারণা থাকা প্রয়োজন। উক্ত কাজ সম্পর্কে ধারণা থাকলেই তিনি অনুসারীদের তা বোঝাতে পারবেন এবং কার্য তদারকিও তার পক্ষে সহজ হয়। তাই অধস্তনদের কাজ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করাও নেতার একটি অন্যতম গুণ।
৭. সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা (Ability to take decision): একজন নেতার যথাসময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রতিষ্ঠানের সফলতাকে ত্বরান্বিত করে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তা অধস্তনদের দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হয়। নেতার দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কর্মীদের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়।
উল্লিখিত গুণাবলি ছাড়াও একজন নেতার অনেক গুণ থাকা দরকার। যেমন- উদ্ভাবনী ক্ষমতা, কর্মে আগ্রহ, শিষ্টাচার, সৃজনশীলতা গুণ, দেশপ্রেম ইত্যাদি। এত গুণ একজন নেতার মধ্যে পাওয়া প্রায় অসম্ভব, তবুও এগুলোর কতিপয় কোনো নেতার মধ্যে থাকলে তিনি একজন আদর্শ নেতা হতে পারবেন বলে আশা করা যায়।