মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার নীতিমালা
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তার কার্য সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য কতকগুলো নীতি প্রণয়ন করে। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা মানব সম্পদ সম্পর্কীয় নীতি প্রণয়ন করে যা তার কার্য পরিচালনার হাতিয়ারস্বরূপ। নিম্নে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার নীতিমালা আলোচনা করা হলো:
১. দলবদ্ধকরণের নীতি (Principle of grouping): মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা দলবদ্ধভাবে কাজ করে ব্যবসায়ের লক্ষ্য অর্জন করে থাকে । প্রতিষ্ঠানের যে কোন কাজকে সহজে সমাধান করা যায় যদি আপনি দলবদ্ধ ভাবে কাজ করেন । এক্ষেত্রে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার দলবদ্ধকরণের প্রচেষ্টার জন্য মানুষের মধ্যে দলবদ্ধভাবে কাজ করার মনোভাব তৈরি হয় ।
২. কৌশলগত নির্বাচন নীতি (Principles of technical selection): মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে উপযুক্ত কর্মী নিয়োগ ও তার নির্বাচন করা । মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কার্য অনুসারে কৌশলগত মানব সম্পদ নির্বাচন নীতি গ্রহণ করে । এই নীতি প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত মানব সম্পদ সংগ্রহ করতে সাহায্য করে । তাই প্রতিষ্ঠানকে মজুরি, বেতন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক পারিশ্রমিক ব্যাপারে সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত গ্রহণস্বরূপ যুক্তিযুক্ত নীতি গ্রহণ করতে হয় ।
৩. পারিতোষিক ও মজুরি কাঠামো নীতি (Remuneration and wages structure policy): শ্রমিকের কাজের বিনিময়ে মজুরি পায় । একজন শ্রমিকের মজুরি নির্ধারন ও তার রক্ষনাবেক্ষন এর কাজ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা করে থাকে । তাই সঠিক ও ন্যায্য পারিতোষিক ও বেতন কাঠামো প্রণয়ন করতে হয়। যা মানব সম্পদের কাজের বিনিময়ে প্রাপ্য।
৪. প্রশিক্ষণের নীতি (Principle of training): প্রশিক্ষণের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো প্রতিষ্ঠানের কাজের সাথে শ্রমিকদের পরিচয় করানো । এবং শ্রমিকদের কাজে আরও দক্ষতা আনয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় । কার্যসম্পর্কে অভিহিতকরণ, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং কাজ সম্পর্কে পূর্ণ তথ্য পরিবেশন করা বিশেষত মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কাজ । মানবসম্পদকে প্রশিক্ষণ প্রদানের নীতি মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম কাজ ।
৫. কার্যকরী যোগাযোগ নীতি (Principle of suitable communication policy): মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সুষ্ঠ ও কার্যকরী যোগসাজশ বজায় রাখার জন্য পরিকল্পিত নীতি প্রণয়ন করে থাকে । নতুবা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে ।
৬. সেবাজনিত নীতি (Welfare policy): প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা ও কল্যাণের প্রতি খেয়াল রাখা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহের মানবিক দায়িত্বের মধ্যে পরে । মানব সম্পদ কর্মী সংগ্রহ করে এবং তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেওয়ার নীতি প্রণয়ন করে ।
৭. শিল্প সম্পর্ক নীতি (Industrial relation policy): মালিকের সাথে শ্রমিক, ব্যবস্থাপক-শ্রমিক, মালিক-পাওনাদার প্রভৃতি শিল্প সম্পর্ক প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে । শিল্প সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা অগ্রণী ভুমিকা পালন করে । সকল ক্ষেত্রে কর্মীদের অংশগ্রহণ, সুষ্ঠু যৌথ দরকষাকষি পরিবেশ সৃষ্টি, শৃঙ্খলা আনয়ন প্রভৃতি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সম্পর্ক ভালো রাখা এই নীতির লক্ষ্য ।
৮. জনশক্তির কাম্য ব্যবহারের নীতি (Proper uses of manpower policy): সঠিক নির্বাচন ও প্রশিক্ষণ এসব যতই পরিকল্পিত করা হোক না কেন জনশক্তির কাম্য ব্যবহারের অনুপস্থিতি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়। তাই এর যথাযথ ব্যবহারের উপর নৈপুণ্য সম্পূর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হয়। এতে মানুষকে মানব হিসেবে স্বীকৃতিদানে বাধিত করে।
মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য
প্রতিষ্ঠানে কোন বিভাগ কোন না কোন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের জন্য অধিকারী। তেমনি মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কতকগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল, যা হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট এর প্রয়োজনীয়তা উত্তরোত্তর প্রতিষ্ঠানের একটি তাৎপর্যমণ্ডিত বিভাগ বলে পরিচিত করতে সক্ষম হয়েছে। নিম্নে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. নীতি নির্ধারক (Policy determination): মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারক হিসেবে কাজ করে। এটা সাধারণ ব্যবস্থাপনার নীতি নির্ধারণেও সহায়তা দান করে ।
২. উন্নয়ন ভিত্তিক (Developing efforts): মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনার কতকগুলো নিয়মনীতির উপর অধিষ্ঠিত । উক্ত নিয়মনীতির বাস্তবায়নে কর্মীদের উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কর্মীদের উন্নয়ন প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের সহায়ক । এতে প্রতিষ্ঠানের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন সহজতম হয় ।
৩. শ্রম-ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক দৃঢ়করণ (Improve labour-management relation): শ্রম-ব্যবস্থাপনা সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যে অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা শ্রমিকের সাথে ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক নির্ধারণ করে।
৪. কল্যাণমূলক ব্যবস্থা (Welfare system): মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা স্বতন্ত্রভাবে কোন শ্রমিকের এবং যৌথভাবে শ্রমিকদের কল্যাণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। HRM ক্ষতিপূরণ এবং বেনিফিট প্রোগ্রাম ডিজাইন এবং পরিচালনা করে থাকে । বেতন কাঠামো, বোনাস, প্রণোদনা, স্বাস্থ্য সুবিধা এবং কর্মীদের আকৃষ্ট ও ধরে রাখার জন্য অন্যান্য সুবিধা মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা করে থাকে ।
৭. অনুপ্রাণিতকরণ (Inspiring): মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা কর্মীদের কার্যে অনুপ্রাণিতকরণ করার জন্য প্রেষণা, সঠিক মজুরি, সঠিক পদোন্নতি, কার্য ও পদ মূল্যায়নের ব্যবস্থা করে। এ অনুপ্রাণিতকরণ মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সঠিকভাবে শ্রমশক্তিকে উদ্বেলিত করে।
৮. নিরপেক্ষতা (Impartiality): একজন সফল মানব সম্পদ ব্যবস্থাপক অবশ্যই নিরপেক্ষ হবে। মানব সম্পদ ব্যবস্থাপকের মধ্যে কোন প্রকার পদক্ষপাতিত্ব থাকলে তা বিভাগীয় কর্মীদের মধ্যে এমনকি সমগ্র প্রতিষ্ঠানের অসন্তোষের সূত্রপাত হয়। কর্মীদের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য শান্তি প্রদান, কর্মচ্যুতি, পদোন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে তার কার্যাবলি অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে করতে হবে।
৯. নিয়োগ ও নির্বাচন: প্রতিষ্ঠানের জন্য মেধাবীদের আকর্ষণ, নিয়োগ এবং নির্বাচন করার জন্য HRM কাজ করে থাকে । কর্মীদের কাজের বিবরণ তৈরি করা, সাক্ষাৎকার নেওয়া এবং কোম্পানির প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাথে HRM জড়িত।
১০. প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন: এইচআরএম প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়ন কর্মসূচীর মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা এবং জ্ঞান বৃদ্ধির উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এটি নিশ্চিত করে যে কর্মচারীরা তাদের বর্তমান ভূমিকা পালন করতে সজ্জিত এবং ভবিষ্যতের দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত।