টার্ম পেপার কি ? টার্ম পেপার লেখার নিয়ম
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য টার্ম পেপার জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক । এই টার্ম পেপার এর জন্য শিক্ষার্থীদের ৫০ মার্ক নির্ধারিত । টার্ম পেপার জমা না দিলে একজন শিক্ষার্থীর মাস্টার্স পাস হবে না । তাই টার্ম পেপার জমা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
আজকে আমরা জানবো টার্ম পেপার কি / কাকে বলে ? ও টার্ম পেপার লেখার নিয়ম সম্পর্কে । জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বেশিরভাগ কলেজগুলোতে টার্ম পেপার নিজ হাতে লিখে জমা দিতে হয় । কিন্তু কলেজ চাইলে এই টার্ম পেপার কম্পিউটার প্রিন্টও নিতে পারে । সুতরাং টার্ম পেপার কিভাবে লিখতে হয় তা জানা খুবই গুরুত্বপুর্ন ।
টার্ম পেপার কি / কাকে বলে ?
কোন বিষয় সম্পর্কে তথ্য, উপাত্ত ও প্রমাণের বিস্তারিত বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণকে টার্ম পেপার বলে । A term paper is a research paper written by a student over an academic term. অর্থাৎ টার্ম পেপার হলো এক ধরণের গবেষণাকর্ম যা একজন শিক্ষার্থী তার একাডেমিক বর্ষে লিখে থাকে ।
করোনা কালীন সময়ে আমরা এসাইনমেন্টের নাম অনেক শুনেছি এসাইনমেন্ট হলো একটি বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষনের মাধ্যমে একটি বিস্তারিত লেখা । যা সর্বোচ্চ ১০ পৃষ্ঠার হতে পারে । কিন্তু টার্ম পেপার হলো কোন বিষয় সম্পর্কে তথ্য, উপাত্ত ও প্রমাণের ভিত্তিতে বিস্তারিত বর্ণনা, ব্যাখ্যা ২০-৩০ পৃষ্ঠার ভিতরে লেখা যা একজন শিক্ষার্থী তার একাডেমিক শিক্ষা শেষ করার জন্য লিখে থাকে ।
টার্ম পেপার লেখার নিয়ম
এই অংশে আমরা টার্ম পেপার লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানবো । টার্ম পেপার কি ? এই সম্পর্কে এখনো না পড়লে উপর থেকে পড়ে আসুন । একটি সুন্দর ও গোছালো টার্ম পেপার লিখতে হলে কিছু বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন । যদি আমরা টার্ম পেপার কি সে সম্পর্কে জেনে টার্ম পেপার লেখার নিয়ম গুলো ভালো করে স্টেপ বাই স্টেপ ফলো করি তাহলে আমরা একটি সুন্দর টার্ম পেপার লিখতে পারবো ।
- বিষয় নির্বাচন:
নিজের আগ্রহ ও সংশ্লিষ্টতার উপর ভিত্তি করে একটি উপযুক্ত বিষয় নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার কলেজ থেকেও নির্দিষ্ট বিষয় ঠিক করে দিতে পারে ।
- প্রাথমিক গবেষণা:
বিষয় সম্পর্কে মৌলিক ধারণা ও তথ্য সংগ্রহ করুন। বিভিন্ন বই, জার্নাল, অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার করুন।
- বিস্তারিত গবেষণা:
বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করুন এবং প্রাসঙ্গিক সাহিত্য পর্যালোচনা করুন। অবশ্যই তথ্যের সঠিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার দিকে নজর দিতে হবে ।
- আউটলাইন তৈরি:
পেপারের কাঠামো নির্ধারণ করুন এবং প্রতিটি অংশের জন্য মূল পয়েন্টগুলি/ বিষয়বস্তুর তালিকা করুন। (টার্ম পেপারের বিষয়বস্তু সম্পর্কে পরের অংশে আলোচনা করা হলো ।)
- খসড়া লেখা:
আউটলাইনের উপর ভিত্তি করে প্রথম খসড়া লিখুন। আপনার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা ও গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যগুলো সুসংগঠিতভাবে লিখুন।
- সম্পাদনা ও পরিমার্জন:
লেখা পুনরায় পড়ুন এবং প্রয়োজনীয় সংশোধন করুন। ব্যাকরণ, বানান ও বিন্যাস ঠিক করুন। পেপারটি A4 অফসেট পেজে নির্দিষ্ট মার্জিন সহকারে এক পৃষ্ঠায় লিখুন । পেজের এক পৃষ্ঠায় লিখে অপর পৃষ্ঠা ফাঁকা রাখতে হবে ।
- জমা দেওয়া:
নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পেপার জমা দিন।
টার্ম পেপারের বিষয়বস্তু
একটি টার্ম পেপার লেখার ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ের উপর নজর দিতে হয় । একটি টার্ম পেপার সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য যে বিষয়বস্তুগুলো অবশ্যই থাকতে হবে তা নিচে দেওয়া হলো –
- Cover page and Inside cover page (কাভার পৃষ্ঠা) (1 Page)
- Student’s Declaration (শিক্ষার্থীর ঘোষনাপত্র) (1 Page)
- Acceptance Letter (তত্বাবধায়কের প্রত্যয়নপত্র) (1 Page)
- Acknowledgment (কৃতজ্ঞতা স্বীকার) (1 Page)
- Abstract (সার সংক্ষেপ) (1 Page)
- Table of Contents (সূচীপত্র)
- Body of the Term Paper (20-25 pages) (পূর্ণ বিবরণ)
- Conclusion (উপসংহার)
- Reference (গ্রন্থপুঞ্জি)
- Appendix (পরিশিষ্ট)
বিস্তারিত বর্ণনা:
- Cover page and Inside cover page (কাভার পৃষ্ঠা)
যেহেতু টার্ম পেপারটি একটি বুক বাইন্ডিং করে হাতে লিখে অথবা কম্পিউটার প্রিন্ট করে (কলেজ ভেদে) জমা দিতে হবে, সেহেতু এর একটি সুন্দর কাভার থাকা প্রয়োজন । কাভার পেজে মূলত Title of the topic (শিরোনাম), Student’s name and Roll number (শিক্ষার্থীর নাম ও রোল), Name and designation of the Supervisor (সুপারভাইজর স্যার এর নাম ও পদবি), Date of preparation (টার্ম পেপার লেখার তারিখ) লেখা থাকে । টার্ম পেপারের শিরোনাম/বিষয় আপনার সুপারভাইজর স্যার ঠিক করে দেবেন অথবা আপনি নিজেও ঠিক করতে পারেন কিন্তু মাথায় রাখতে হবে যে, টার্ম পেপারের শিরোনাম/বিষয় অবশ্যই ইউনিক হতে হবে ।
নমুনা চিত্র:
2. Student’s Declaration (শিক্ষার্থীর ঘোষনাপত্র)
Here student will declare about the originality and uniqueness of the work. অর্থাৎ শিক্ষার্থী এখানে ঘোষণা করবে যে, “টার্ম পেপারটি তার নিজস্ব কর্ম এবং এটি এর আগে কোথাও লেখা বা প্রকাশিত হয় নি”। লিখে শিক্ষার্থী নিচে স্বাক্ষর করবেন ।
নমুনা চিত্র:
3. Acceptance Letter (তত্বাবধায়কের প্রত্যয়নপত্র)
তত্বাবধায়ক স্যার এখানে এই বলে প্রত্যয়ন প্রদান করবেন যে , এই টার্ম পেপারটি তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে লিখিত হয়েছে । এবং এটি শিক্ষার্থীর মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের ক্ষেত্রে অনুমোদন প্রদান করছি ।
নমুনা চিত্র:
4. Acknowledgment (কৃতজ্ঞতা স্বীকার)
An acknowledgement refers to the section where you show your appreciation for the people who contributed to your project. অর্থাৎ এই অংশটিতে শিক্ষার্থী টার্ম পেপার লেখার ক্ষেত্রে যাদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবে ।
নমুনা চিত্র:
5. Abstract (সার সংক্ষেপ)
An abstract is a short summery of your research/term/thesis paper. অর্থাৎ এই অংশটি এমনভাবে লিখতে হবে যাতে একজন পাঠক একবার পড়েই টার্ম পেপারের বিষয় সম্পর্কে ও এই গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা পেতে পারে ।
6. Table of Contents (সূচীপত্র)
The table of contents is an organized listing of your document’s chapters, sections and figures clearly labelled by page number. অর্থাৎ এই অংশে পেপারের বিভিন্ন বিভাগ ও তাদের পাতার নম্বর তালিকাভুক্ত করতে হবে ।
7. Body of the Term Paper (20-25 pages) (পূর্ণ বিবরণ)
এই অংশে পেপারের শিরোনাম সম্পর্কিত তথ্যাদি বিচার, বিশ্লেষন ও ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে । এটিই মূলত টার্ম পেপারের মূল অংশ । এটিকে চার ভাগে ভাগ করে লেখা যায় ।
১. ভুমিকা (Introduction): এই অংশে বিষয়ের পটভূমি ও প্রাসঙ্গিকতা, গবেষণার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করতে হবে ।
২. সাহিত্য পর্যালোচনা (Literature Review): এই অংশে নির্ধারিত টার্ম পেপারের বিষয়ের উপর পূর্ববর্তী কোন গবেষণা আছে কিনা বা থাকলে তার ফলাফল সম্পর্কে লিখতে হবে । বর্তমান গবেষণার সাথে পূর্ববর্তী কোন গবেষণা থাকলে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে ।
৩. পদ্ধতি (Methodology): এই অংশে গবেষণা পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে হবে । সেই সাথে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে হবে ।
৪. ফলাফল (Results): এই অংশে গবেষণার ফলাফল ও তথ্য বিভিন্ন টেবিল, চিত্র বা গ্রাফ ব্যবহার করে প্রদর্শন করতে হবে ।
৫. আলোচনা (Discussion): এই অংশে গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করতে হবে । এবং গবেষণার সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য পরামর্শ প্রদান করতে হবে ।
8. Conclusion (উপসংহার)
এই অংশে গবেষণার ফলাফল উল্লেখপুর্বক সামগ্রিক পর্যালোচনা করতে হবে ।
9. Reference (গ্রন্থপুঞ্জি/তথ্য সূত্র)
References are the source materials. অর্থাৎ গবেষণা করার সময় ও তা লেখার সময় যেসকল জায়গা থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে তার সঠিক সূত্র লিখতে হবে । যদি কোন বই থেকে নিয়ে থাকেন তাহলে সেই বইয়ের বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে ।
10. Appendix (পরিশিষ্ট)
The appendix of a paper consists of supporting information for the research that is not necessary to include in the text. অর্থাৎ এই অংশে পেপারে লিখিত অতিরিক্ত তথ্য, তথ্য সেট, সার্ভে ফর্ম ইত্যাদি সঠিকভাবে লিখতে হবে ।
আশা করছি লেখাটি আপনাদের ভালো লাগবে । কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে কমেন্ট করতে পারেন । ধন্যবাদ ।
টার্ম পেপার নমুনা কপি
টার্ম পেপারের নমুনা কপি দেখার জন্য বা টার্ম পেপারের নমুনা কপি ডাউনলোড করার জন্য নিচের ডাউনলোড বোতামে চাপ দিন ।