অর্থনীতির পরিধি বা আওতা ব্যপক কারণ অর্থনীতি মানুষের অর্থনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত । তাই অর্থনীতি সম্পর্কে জানতে হলে এর বিষয়বস্তু সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা জরুরী । আমরা যারা অনার্স বা এইচ এস সি বা এস এস সি তে পরি তাদের অনেক সময়ই পরীক্ষায় অর্থনীতির বিষয়বস্তু আলোচনা কর । এই প্রশ্নটি এসে থাকে । তাই এই পোস্টির নাম – অর্থনীতির বিষয়বস্তু আলোচনা কর ।
অর্থনীতির বিষয়বস্তু আলোচনা কর ।
সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে অর্থনীতির পরিধি বা বিষয়বস্তুরও পরিবর্তন ঘটেছে। অর্থনীতির বিষয়বস্তু সম্পর্কে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে মতবিরোধ বিদ্যমান। অর্থনীতির বিভিন্ন সংজ্ঞা থেকে এর বিষয়বস্তু বা আওতা সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া যায় তা নিচে বর্ণনা করা হলো :
১। সমাজবদ্ধ মানুষের কার্যাবলি আলোচনা
সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে অর্থনীতি মূলত, সমাজবদ্ধ মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি পর্যালোচনা করে। সমাজবহির্ভূত কোনো ব্যক্তির কাজকর্ম অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় নয়। কারণ এসব সমাজ বহির্ভূত মানুষের কাজকর্মের দ্বারা কোনো অর্থনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি হতে পারে না। তাই শুধুমাত্র সমাজবদ্ধ মানুষের কার্যাবলিই অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়।
২। অর্থনৈতিক কার্যাবলি
অর্থনীতি কেবল মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলি পর্যালোচনা করে। অর্থনৈতিক কার্যাবলি বলতে মানুষের অর্থোপার্জন ও ব্যয়সংক্রান্ত কার্যাবলিকে বুঝায়। সুতরাং, মানুষের যে সব কাজকর্ম অর্থ আয় ও অর্থ ব্যয়ের সাথে জড়িত তাই অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়। কিন্তু যে সব কাজের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক পাওয়া যায় না, তা অর্থনীতির আলোচ্য বিষয় নয়। অধ্যাপক কেয়ার্নক্রসের মতে, “মানুষের কার্যাবলির যে অংশ অর্থের সাথে জড়িত তার আলোচনাই হলো অর্থনীতির বিষয়বস্তু”।
৩। অভাবমোচন ও কল্যাণসাধন
মানুষ সামাজিক জীব। কিন্তু সমাজ জীবনে মানুষ অসীম অভাবের সম্মুখীন। তাই কীভাবে সমাজের সীমিত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অধিক সম্পদ উৎপন্ন করা যায় এবং কীভাবে এ সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে সর্বাধিক কল্যাণ অর্জন করা যায়, তাই অর্থনীতির আলোচ্য বিষয়। ফিসারের মতে, “অর্থনীতির প্রধান উদ্দেশ্য হলো সম্পদের সাথে মানুষের জীবন ও কল্যাণের সংযোগ সাধন করা”।
৪। উৎপাদন-বিনিময়-ভোগ
মানুষের অর্থনৈতিক কার্যাবলিকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়- (i) উৎপাদন, (ii) বিনিময় ও (iii) ভোগ। মানুষ প্রকৃতিপ্রদত্ত সম্পদকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করে। মানুষ তার উৎপাদিত দ্রব্য নিজে সবটাই ভোগ করে না। তাই সমাজে বিনিময় ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে। উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী বিনিময় করে ভোগের মাধ্যমে মানুষ তার অভাবপূরণ করে। তাই অর্থনীতিতে উৎপাদন, বিনিময়, ভোগ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয় আলোচনা করা হয়।
৫। প্রকৃত ও নিরপেক্ষ
বিজ্ঞান অধ্যাপক এল. রবিন্স, কেয়ার্নক্রস, স্টিগলার প্রমুখ অর্থনীতিবিদের মতে, অর্থনীতি একটি প্রকৃত বিজ্ঞান। সুতরাং, ভালমন্দের প্রশ্নে এদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে। নিরপেক্ষ বিজ্ঞান হিসেবে অর্থনীতি, নীতিশাস্ত্রের পদবাচ্য নয়। তাই কোনো অকল্যাণমূলক কাজও অর্থ উপার্জনে সহায়তা করলে তাও অর্থনীতির আওতাভুক্ত। তাই বলে অর্থনীতি সামাজিক কল্যাণের পরিপন্থী নয়। সমাজ যদি ক্ষতিকর বা অকল্যাণকর ভোগ বর্জন করে তাতে অর্থনীতি মোটেও হস্তক্ষেপ করবে না।
৬। সমস্যা সমাধানের পথনির্দেশক
সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে অর্থনীতি কেবল জ্ঞানের জন্যই জ্ঞান দান করে না; বরং সে জ্ঞানের দ্বারা সমাজের নানাবিধ অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানের পথও নির্দেশ করে। সুতরাং, অর্থনীতি কেবল মানব জীবনের অর্থনৈতিক সমস্যাসমূহের বিচারবিশ্লেষণ করে না- সাথে সাথে সমাজের নানাবিধ সমস্যা সমাধানের পন্থাও নির্দেশ করে। তাই অর্থনীতিকে একাধারে আলোক প্রদানকারী ও ফল প্রদানকারী বিজ্ঞান নামে অভিহিত করা হয়।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, অর্থনীতির পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। পরিবর্তনশীল সমাজে অর্থনৈতিক সমস্যা যেমন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি এসব সমস্যা সমাধানের তাগিদে অর্থনীতির পরিধিও ক্রমশ সম্প্রসারিত হচ্ছে। অধ্যাপক ভাইনারের মতে, “অর্থনীতিবিদ্গণ যা আলোচনা করেন তাই অর্থনীতির আওতাভুক্ত”। অধ্যাপক স্যামুয়েলসন বলেন, “অর্থনীতিকে কোনো এক সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা ঠিক নয়; এর পরিধি যথেষ্ট স্থিতিস্থাপক হওয়া উচিত”।
প্রশ্ন :
অর্থনীতির বিষয়বস্তু আলোচনা কর । অথবা, অর্থনীতির আওতা বা পরিধি সম্পর্কে আলোচনা কর । অথবা অর্থনীতির মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর ।